যুদ্ধ ও বিজ্ঞান

যুদ্ধ ও বিজ্ঞান

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২২ জানুয়ারী, ২০২৫

সামরিক গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে সরাসরি জড়িয়ে ফেলার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে ইউরোপীয় কমিশন। জার্মানিতে সামরিক উদ্দেশ্যে বৈজ্ঞানিক গবেষণার ওপর বহু দশক জুড়ে কতকগুলো নিষেধাজ্ঞা চালু ছিল। এখন জার্মান সরকার বলছে, শুধু শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে বৈজ্ঞানিক চালাতে হবে, এই আদেশ তুলে নেওয়ার সময় এসে গেছে। স্বভাবতই এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের অনেকে প্রতিবাদ করেছেন। হামবুর্গের জার্মান ইলেকট্রন সিংক্রোটন –এর কণা পদার্থবিদ হান্‌স ইয়ুং বলেছেন, ‘দীর্ঘকাল ধরে অসামরিক ও শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে গবেষণা চালানোর যে-ধারা চলে আসছিল সেটা বদলে ফেলার জন্য প্রচুর রাজনৈতিক চাপ আসছে। বলা হচ্ছে, বিজ্ঞান-নীতিকে আরও রাজনীতি-অভিমুখী করে তুলতে হবে। এটা খুবই দুশ্চিন্তাজনক’। হান্‌স ইয়ুং ‘শান্তির জন্য বিজ্ঞান’ নামক একটি সংগঠনের সদস্য।২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রাইনে অনুপ্রবেশ করবার পর থেকেই এই আওয়াজ উঠছিল। ২০২২-এ রাশিয়া পুরোদস্তুর আক্রমণ করার পর সে আওয়াজ জোরদার হয়েছে। ইউরোপিয়ান কমিশনের সভানেত্রী উর্সুলা ফন ডার লেইডেন বলেছেন, “আরও বিপজ্জনক ভূ-রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে’ এমন ধরনের গবেষণা করতে হবে যার সামরিক ও বেসামরিক দুরকম প্রয়োগই সম্ভব। কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিরক্ষা পলিসি বিশেষজ্ঞ জেমস ব্ল্যাক বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সরকার-পোষিত সামরিক ল্যবরেটরিগুলি থেকেই বেরিয়ে আসত অজস্র বেসামরিক প্রযুক্তি। আজকে ঠিক উলটো কথা বলছেন তাঁরা – এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আর উৎপাদন-শিল্প থেকেই বেরিয়ে আসবে সামরিক প্রযুক্তি। আমেরিকা আর চীনের তুলনায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পরিস্থিতি আলাদা। ও দুটি দেশ সামরিক গবেষণার পিছনে এখনই বিপুল খরচ করে। সেখানে বিদ্বৎমণ্ডলী আর সামরিক বিভাগের সম্পর্ক অনেক ঘনিষ্ঠ। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ফিয়োনা কিম্ব্রে জানিয়েছেন, চীনে সামরিক কেন্দ্র আর বিদ্যাকেন্দ্রগুলি প্রায়শই একই জায়গায় অবস্থিত। উভয় কেন্দ্রের নেতারা অনেকেই উভয় কেন্দ্রেই কাজ করেন। এর মধ্য দিয়ে চীন যে সংযোগ-জাল গড়ে তুলেছে তা গড়তে বহু দশক সময় লেগেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে জাপান ছিল শান্তিবাদী দেশ। কিন্তু গত দশক থেকে তারাও সম্ভাব্য সামরিক প্রয়োগের উদ্দেশ্যে গবেষণায় বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে। অতীতে যেসব দেশের আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস রয়েছে সেসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এই সামরিক-বেসামরিক যৌথ গবেষণার আওয়াজ বেশি জোরালো। যেমন স্ক্যান্ডিনেভীয় এবং পূর্ব ইউরোপের দেশসমূহ। ইউরোপিয়ান কমিশন গত বছর একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে একটি যৌথ গবেষণা প্রক্রিয়া চালু করার প্রস্তাব পেশ করেছে যা ২০২৮ সালে চালু হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিদরা কিন্তু মোটের ওপর এ পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। বরং তাঁরা চাইছেন, বিদ্যমান সামারিক-বেসামরিক গবেষণা-সংস্থাগুলির অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হোক। ২৬০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্ঘ জার্মান রেক্টর্স অধিবেশনের সভাপতি ভাল্টের রোজেনটাল আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এ পরিকল্পনা চালু হলে আমলাতন্ত্রেরে নিয়ন্ত্রণ বাড়বে, এবং বেসামরিক গবেষণার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সম্পদ কমবে। প্রশ্ন জাগে, যদি কখনো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধে, তাহলে মনুষ্যপ্রজাতি এই অতি উন্নত বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির ঠেলা সামলে টিকে থাকবে তো?

https://doi.org/10.1038/d41586-025-00117-z

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − four =