রঙের খেলায় কৃ বু কাবু

রঙের খেলায় কৃ বু কাবু

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৫ জুলাই, ২০২৫

আমরা অনেকসময়ই নিজেদের অনুভবের অভিব্যক্তি রঙের মধ্যে দিয়ে করে থাকি। যেমন বলি “আ তঙকে নীল” বা “রেগে আগুন”, অর্থাৎ আগুনের মতো লাল। প্রতিদিনের কথায় শোনা এই সব শব্দের অর্থ আমরা কীভাবে শিখি? চোখে দেখা রঙ থেকে, না কি কেবল শুনে শুনে ভাষাগত অভ্যস্ততা থেকেই? এই নিয়েই সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও গুগল ডিপ মাইন্ড-এর এক যৌথ গবেষণা পরিচালিত হয়। নেতৃত্বে ছিলেন স্নায়ুবিজ্ঞানী লিসা আজিজ-জাদেহ। গবেষণায় অংশ নেন স্বাভাবিক দৃষ্টিসম্পন্ন প্রাপ্তবয়স্ক, বর্ণান্ধ মানুষ, পেশাদার চিত্রকর এবং ChatGPT। উদ্দেশ্য একটাই- রঙের প্রতীকী অর্থ কি আমরা সত্যিই চোখ দিয়ে শিখি, না এটি কেবল ভাষার অভ্যস্ততায় গড়ে ওঠে? অনলাইন সার্ভেতে অংশগ্রহণকারীরা ‘ফিজিক্স’ বা ‘বন্ধুত্ব’ জাতীয় বিমূর্ত শব্দের সঙ্গে ডিজিটাল রং-থালি থেকে একটি রঙ মেলান। আবার ‘on red alert’ বা ‘a very pink party’-র মতো চেনা-অচেনা অভিব্যক্তির মানে ব্যাখ্যা করেন। চমকপ্রদভাবে, বর্ণান্ধ অংশগ্রহণকারীরাও প্রায় একই রঙ বেছে নেন যা স্বাভাবিক দৃষ্টিসম্পন্নরাও বেছে নেন। তাতে বোঝা যায়, জীবনভর ভাষার সংস্পর্শ, রঙের দুনিয়ার অনেকখানি ঘাটতি পুষিয়ে দিতে পারে। কিন্তু পেশাদার শিল্পীরা তুলনামূলকভাবে বেশি নিখুঁতভাবে প্রতীকী রঙ বুঝে ফেলেন। কারণ- তাদের দৈনন্দিন রঙ নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা। এখন প্রশ্ন হল, এখানে ChatGPT কি করল? সে-ও চেনা রূপক বোঝাতে পারল অনায়াসে। কিন্তু ‘burgundy meeting’ বা ‘inverted green’-এর মতো অদ্ভুত চ্যালেঞ্জে হোঁচট খেল। ব্যাখ্যার সময় সে আশ্রয় নিল সাংস্কৃতিক অর্থের উপরই। ‘গোলাপি মানেই ভালোবাসা, উচ্ছ্বাস, ইতিবাচকতা’- সেই চেনা শব্দ ছকের। শিল্পীরা যেখানে জিতল, সেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ( কৃ বু) কিন্তু হেরে গেল। কেন? কারণ মানুষ শুধু একটা রঙকে চোখে দেখে না, সে অনুভব করে, সৃষ্টি করে। অ্যালিজারিন বা গাঢ় লাল রঞ্জক আর আলট্রামারিন বা বিশুদ্ধ নীল বর্ণ মিশিয়ে যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটায়, তাদের মাথায় গড়ে ওঠে এক ধরণের রঙের মানচিত্র। রঙ, আলো আর মেজাজের এক সরাসরি শরীরী অভিধান। এই গবেষণা ‘গ্রাউন্ডেড কগনিশন’ তত্ত্বকে আবার প্রমাণ করল। যে ধারণা অনুযায়ী, আমরা যা শিখি তা কেবল একটি মাত্র ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমেই শিখি না। ব্যবহার করি আরও বাকি ইন্দ্রিয়গুলিকে। কিন্তু কৃ বু যদি রঙ ভুল বোঝে? যদি সবুজ এর অর্থ বিপদ ভেবেই সে বিপদমুক্ত রাস্তাও বন্ধ করে দেয়? এখানেই বিপত্তি। তাই ভবিষ্যতে কৃ বু-কে শুধু ভাষা নয়, দিতে হবে দৃষ্টিও। CLIP-এর মতো মাল্টিমোডাল মডেলে তাই ক্যামেরা-সেন্সর যুক্ত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে যাতে ভাষার সঙ্গে ছবি বা স্পর্শের সংযোগ ঘটে। তবে বড় তথ্য ভাণ্ডার, গোপনীয়তার ঝুঁকি, ও নজরদারি সব নিয়ে খরচ বাড়বে। তাই ভবিষ্যতের সফটওয়্যার ডিজাইনারদের দরকার কঠোর নীতিমালা। আজিজ-জাদেহ বলছেন, “শুধু প্যাটার্ন অনুকরণ করলেই হবে না, অনুভব করতে পারাটাই মানুষের বিশেষত্ব।” আসলে চোখ না থাকলে রঙের সংবেদন বোঝা যায় না। আর কৃ বু-এর রঙজ্ঞান এখনও গল্প মাত্র।

তথ্যসূত্র : Cognitive Science journal.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four + seven =