প্রকৃতিতে রঙের মেলা। সবুজ, কমলা, হলুদ, লাল। কিন্তু এই রঙ, সৌন্দর্য শুধুমাত্র মানুষের উপভোগের জন্য বিকশিত হয়নি। অনেকসময় প্রাণীদের মধ্যে নির্দিষ্ট রঙ সংকেত হিসেবে কাজ করে, কোনো ক্ষেত্রে সঙ্গীকে আকর্ষণ করতে আবার কিছু ক্ষেত্রে শিকারীদের সতর্ক করতে। রঙের উৎস নিয়ে বিজ্ঞান মহলে গবেষণা চলছে, তবুও এই মনোগ্রাহী রঙগুলোর উত্স আজও স্পষ্ট নয়। একটি নতুন গবেষণায়, মার্কিন গবেষকরা বিগত ১০ কোটি বছর ধরে প্রাণীদের মধ্যে রঙের বিবর্তনের উপর আলোকপাত করেছেন। ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটির ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজিস্ট জ্যাচারি এমবার্টস বলেছেন তারা জানার চেষ্টা করেছেন উজ্জ্বল রঙের বিবর্তন ঠিক কোন সময়ে এবং কেন ঘটেছিল।
অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনীয় বাস্তুবিজ্ঞানী জন এবং উইনস এমবার্টস গাছপালা এবং প্রাণীদের ব্যবহৃত রঙের সংকেতের উপর অধ্যয়ন শুরু করেন। গবেষকদের মতে উদ্ভিদের রঙ প্রাণীদের নির্বাচনী চাপের কারণে বিকশিত হয়েছে। গাছপালা দুটি প্রধান ধরনের রঙের সংকেত ব্যবহার করে: ফল-ভোজী প্রাণীরা রঙিন ফল দেখে আকর্ষিত হয় আর সে ফল খেয়ে বীজ ছড়াতে সাহায্য করে। অন্যদিকে রঙবেরঙের ফুল পরাগায়নকারীদের প্রলুব্ধ করে, তাদের কাছে ডাকে, ফুলের পরাগ অন্য ফুলে ছড়িয়ে দেয়।
প্রাণীরা আবার প্রকৃতির রঙের সাথে নিজেদের মেলাতে বা ছদ্মবেশ ধারণের জন্য এবং তাপ নিয়ন্ত্রণ জন্য বিভিন্ন রঙে ধরা দেয়। তবে যে সব প্রাণীদের গায়ের রঙ খুব ঝকঝকে, চড়া তারা হয়তো অন্যদের সতর্ক করে তাদের যেন কেউ বিরক্ত না করে। কিছু প্রাণী তাদের নিজস্ব প্রজাতির সঙ্গীকে আকর্ষণ করতে রঙের সংকেত ব্যবহার করে। আর কিছু ক্ষেত্রে প্রাণীর গায়ের রঙ খুব ঝকঝকে হয় যা আগে থেকেই জানান দেয়, শিকারীদের সতর্ক করে যে তারা বিষাক্ত বা অন্যান্যদের জন্য বিপদজনক। বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় এই বৈশিষ্ট্যকে বলা হয় অ্যাপোসেমেটিজম। পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে, উইনস এবং এমবার্টস উপসংহারে আসেন যে প্রাণীদের মধ্যে রঙ চেনার ক্ষমতা উদ্ভিদের রঙিন ফুল ফল উৎপাদনের প্রায় ১০ কোটি বছর আগে বিবর্তিত হয়েছিল। গবেষকরা বিশ্লেষণ থেকে জানা যায় প্রাণীদেহে সতর্কীকরণের জন্য রঙের ব্যবহার প্রায় ১৫ কোটি বছর আগে শুরু হয়েছিল, আর তারপরে আজ থেকে প্রায় ১০ কোটি বছর আগে সঙ্গীকে আকর্ষণ করার জন্য রঙের ব্যবহার শুরু হয়, রঙ চেনার ক্ষমতা আবির্ভাবের ৪০ কোটি বছর পরে। তারা আরও জানান যে রঙ চেনার ক্ষমতা প্রায় ৫০ কোটি বছর আগে সর্বপ্রথম প্রাচীন সন্ধিপদী প্রাণী এবং সমুদ্রে বসবাসকারী মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে স্বাধীনভাবে বিকশিত হয়েছিল। তবে সে সময়ে এই বৈশিষ্ট্য কী ধরনের বিবর্তনীয় সুবিধা দিত তা নিয়ে ভবিষ্যতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।