রাজাভাতখাওয়ায় চলছে বিলুপ্ত শকুন বাঁচানোর লড়াই

রাজাভাতখাওয়ায় চলছে বিলুপ্ত শকুন বাঁচানোর লড়াই

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌।
Posted on ২৪ জুলাই, ২০২২

পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র শকুন প্রজনন কেন্দ্র আলিপুরদুয়ারের বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের রাজাভাতখাওয়ায়। সোমবার সেখান থেকে শরীরে প্ল্যাটফর্ম ট্রান্সমিটার টার্মিনাল (পিটিটি) লাগানো ১০টি হোয়াইট-ব্যাকড শকুনকে গভীর জঙ্গলের খোলা আকাশে ছাড়া হল। মূলত পরিবেশের সঙ্গে তারা কতটা মানিয়ে নিতে পারে দেখার জন্য। ২০০২ থেকে রাজাভাতখাওয়ায় চলছে শকুন প্রজননের কাজ। বছর দেড়েক আগেও ১০টি শকুনের শরীরে পিটিটি লাগিয়ে তাদের খোলা আকাশে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শকুনদের নিয়ে সাম্প্রতিক যে তথ্য উঠে এসেছে সেটা আশাব্যঞ্জক নয়। বোম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটির অন্যতম গবেষক বিভু প্রকাশ জানিয়েছেন, ৩৫ বছর আগেও ভারতে ৪ কোটির বেশি শকুন ছিল। আজ সেটা কমে ২০ হাজারেরও নীচে! ৯৯.৯ শতাংশ শকুন অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। ডাইক্লোফেনাক, নিমুলোসোলাইড, কিটোপ্রোফেনের মত ওষুধ শকুনের জন্য টক্সিক। এই সমস্ত বিষাক্ত রাসয়নিকের প্রভাবেই শকুন মারা যাচ্ছে বলে দাবি বিভু প্রকাশের। বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ, মৃত গবাদি পশুর মাংস খাওয়ার সময় তার শরীরে বিষাক্ত জৈব রাসয়নিক মিশে থাকলে সেটা শকুনের শরীরে প্রবেশ করছে আর তারপরই শকুনদের মৃত্যু হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু প্রজননে শকুনদের বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। তাই তাদের পরামর্শ অনুযায়ী গবাদি পশুকে ডাইক্লোফেনাক দেওয়া নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। পরিবর্তে মেলাক্সিক্যাম দেওয়া হচ্ছে যা শকুনের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক নয়।
রাজাভাতখাওয়া শকুন প্রজনন কেন্দ্রে এখন চার রকমের প্রজাতির শকুনকে বাঁচিয়ে রাখার প্রক্রিয়া চলছে। হোয়াইট-ব্যাকড, স্লেন্ডার বিলড, লং-বিলড আর হিমালয়ান গ্রিফন ভালচার। আলিপুরদুয়ার থেকে ২০০ বর্গকিলোমিটার ব্যসার্ধের মধ্যে অসমের বরপেটা ঠেকে কালিম্পং জেলার মধ্যে রয়েছে ১০টি শকুন। স্যাটেলাইট ডিভাইস থাকায় প্রত্যেকদিনই ১০টি শকুনের গতিবিধির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। চার প্রজাতির সঙ্গে আরও এক প্রায় বিলুপ্ত প্রজাতির শকুন, রেড হেড ভালচারের প্রজনন শুরু হবে রাজাভাতখাওয়ায়। বিভু প্রকাশের আশা, আরও ১৫ বছর পর বাংলার আকাশে আবার আগের মতই শকুনদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে।