রাতের আলোর প্রভাবে মাছের আচরণগত পরিবর্তন

রাতের আলোর প্রভাবে মাছের আচরণগত পরিবর্তন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৯ অক্টোবর, ২০২৪
মাছের আচরণগত পরিবর্তন

বিজ্ঞানের ব্যাখ্যায় আলো এক ধরনের শক্তি। এই আলোর সাহায্যে আমরা দেখতে পাই। আলো বস্তুকে দৃশ্যমান করে। তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের আকারে আলো এক স্থান থেকে আর এক স্থানে যায়, এবং মাধ্যম ভেদে আলোর বেগ পরিবর্তিত হয়। আলোর উপকারিতা অনেক। কিন্তু এই আলোর দূষণের কারণেই আজ প্রাণীকূলের প্রাণ ওষ্ঠাগত। রাতে কৃত্রিম আলো পরিবেশকে দূষিত করে। রাস্তা, বাড়ি বা শিল্প এলাকায়। বাড়ির ভিতরেও এই আলো আমাদের রাতে সজাগ রাখে, আমাদের মনোযোগ ধরে রাখে। কিন্তু কৃত্রিম আলো আমাদের শরীরের জৈবিক প্রক্রিয়াগুলোর প্রাকৃতিক ছন্দকে ব্যাহত করে। তবে আমাদের মধ্যে এই আলোর দূষণ নিয়ে সচেতনতার চিহ্নমাত্র দেখা যায় না। পরিবেশবিদদের মতে, আলোর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার শুধু মানুষ নয় পাখি, কীটপতঙ্গের ভয়ঙ্কর ক্ষতি করছে। বিপন্ন করে তুলেছে জীবজগত। মাছেরাও এই কৃত্রিম আলোর প্রভাবে প্রভাবিত হয়। তাদের সাঁতার কাটার প্রবণতা কমে যায়। তারা একত্রিত হয়ে থাকার চেষ্টা করে। পরীক্ষাগারে দেখা গেছে কৃত্রিম আলোর কারণে অ্যাকোয়ারিয়ামের দেয়ালের কাছে মাছেরা বেশি সময় কাটাচ্ছে। এই বৈষিষ্ট্যকে ইংরেজিতে বলে “থিগমোট্যাক্সিস” যা তাদের মধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করে। মানুষের মতো মাছেদের ক্ষেত্রেও নীল আলোর প্রভাব বেশ শক্তিশালী। গবেষকদের অনুমান ঘুমের ব্যাঘাত তাদের মধ্যে এই ধরনের আচরণগত পরিবর্তনের কারণ। কৃত্রিম আলোর কারণে বেশ কয়েক রাত জেগে থাকার ফলে তাদের মধ্যে উদ্বেগ দখা দেয়। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে আলোর দূষণের প্রভাব শুধু সেই মাছেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, তাদের সন্তানদের মধ্যেও তা ছড়িয়ে গেছে। গবেষকরা ছোটো মাছের কার্যকলাপের মাত্রা পরিমাপ করার জন্য এক বিশেষ স্বয়ংক্রিয় ট্র্যাকিং সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে মাছের লার্ভার সাঁতারের আচরণ পরীক্ষা করেন। দেখা গেছে মাছের বাচ্চারা দিনের বেলাতেও কম মাত্রায় সাঁতার কাটছে যদিও এই বাচ্চারা কোনোভাবেই রাতের বেলায় কৃত্রিম আলোর সংস্পর্শে আসেনি। আলোর দূষণ মাছের স্বাভাবিক আচরণকে ব্যাহত করেছে, এবং এই ব্যাঘাতের ফলে তাদের কর্মক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে। গবেষকরা কৃত্রিম আলোর ব্যবহারে মানুষকে আরও বেশি সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। মাছের আচরণে এই উদ্বেগ আলোর সমস্ত তরঙ্গদৈর্ঘ্যের জন্যই দেখা গিয়েছিল, তবে ছোটো তরঙ্গদৈর্ঘ্যের নীল আলোর প্রভাব দ্রুততম এবং শক্তিশালী। তাই তারা নীল তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর ব্যবহার কমিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 4 =