রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকিসম্পন্ন ব্যক্তিদের রোগ প্রতিরোধ করতে ওষুধ

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকিসম্পন্ন ব্যক্তিদের রোগ প্রতিরোধ করতে ওষুধ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস শরীরে অসহ্য ব্যথা, ফোলাভাব এবং অঙ্গের বিকৃতি ঘটায়। শরীরের জয়েন্টে রেখাযুক্ত টিস্যু বা সাইনোভিয়াল মেমব্রেন স্ফীত এবং ঘন হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তরল তৈরি হয় যার থেকে জয়েন্টগুলোর ক্ষয় হয়। এতে ত্বক, চোখ, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস এই সব অঙ্গও ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এই অটোইমিউন রোগে মানুষের ইমিউন সিস্টেম নিজের শরীরের বিভিন্ন কোশ, কলাকে আক্রমণ করে।
পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের বেদনাদায়ক উপসর্গ উপশম করার জন্য ব্যবহৃত একটা ওষুধ, এই রোগ মানুষের শরীরে বিকাশ হওয়া বন্ধ করতে কার্যকর হতে পারে। ল্যান্সেট এ প্রকাশিত কিংস কলেজ লন্ডনের এই গবেষণায় যে ওষুধ ব্যবহৃত হয়েছে তা হল অ্যাবাটাসেপ্ট। এর কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা পরীক্ষা করার জন্য ২১৩ জন রোগীকে নিয়ে একটা ট্রায়াল সেট আপ করা হয়েছিল। এই রোগীদের জয়েন্ট ব্যথার মতো প্রাথমিক লক্ষণের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন হিসেবে সনাক্ত করা হয়েছিল।
ক্লিনিকাল ট্রায়ালে, ১১০ জন অংশগ্রহণকারীকে অ্যাবাটাসেপ্ট দেওয়া হয়েছিল, এবং ১০৩ জন অংশগ্রহণকারীকে এক বছরের জন্য একটি প্ল্যাসিবো দেওয়া হয়েছিল। তারপর তাদের শারীরিক অবস্থা ১২ মাস ধরে অনুসরণ করে দেখা গিয়েছিল, প্রথম বছরে প্ল্যাসিবো গ্রুপের শতকরা ২৯ জনের রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস দেখা গিয়েছিল, যেখানে অ্যাবাটাসেপ্ট গ্রহণকারী গ্রুপে মাত্র ৬ শতাংশ এই রোগের শিকার হয়েছেন। দ্বিতীয় বছরের পর, প্ল্যাসিবো গ্রুপের ৩৭ শতাংশ এবং অ্যাবাটাসেপ্ট গ্রুপের ২৫ শতাংশের এই রোগ হয়। যেহেতু রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে শরীর নিজের ইমিউন সিস্টেম দিয়ে নিজের কলাকে আক্রমণ করে, অ্যাবাটাসেপ্ট সেখানে টি-কোশের প্রতিক্রিয়া কমিয়ে দেয়। এই টি-কোশ ইমিউন সিস্টেমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এটি প্যাথোজেন, টিউমার এবং পরিবেশ থেকে বিভিন্ন অ্যান্টিজেন সনাক্ত করতে পারে এবং ইমিউনোলজিক্যাল মেমরি এবং স্ব-সহনশীলতা বজায় রাখে। টি-কোশ অনেক প্রদাহজনক এবং অটোইমিউন রোগের প্রধান চালক হিসেবেও কাজ করে।
মাত্র দুবছরের ট্রায়ালে এখনও স্পষ্ট নয় যে অ্যাবাটাসেপ্ট, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে হওয়া রোধ করে নাকি এই রোগ বিকাশ ধীর করে। তাছাড়া ফল ধরে রাখার জন্য অ্যাবাটাসেপ্ট এক বছরের বেশি প্রয়োগ করা দরকার বলে মনে হয়। তবে অ্যাবাটাসেপ্ট গ্রুপের মানুষদের কম ব্যথা ও প্রদাহ হয়েছে, জীবনযাত্রার মান অন্যদলের তুলনায় ভালো ছিল। এই ওষুধ থেকে বমি বমি ভাব এবং ডায়রিয়া সহ হালকা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে।