রূপান্তরিত প্রোটিন ও তাপমাত্রার ভূমিকা

রূপান্তরিত প্রোটিন ও তাপমাত্রার ভূমিকা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২২ জুলাই, ২০২৫

রূপান্তরিত প্রোটিন কোষের “আকৃতি পরিবর্তন” করে। মানুষ, প্রাণী এবং ব্যাকটেরিয়াতে এদের পাওয়া যায়। তারা বিস্ময়করভাবে দুটি স্বতন্ত্র আকারের মধ্যে পরিবর্তন করতে পারে । ফলস্বরূপ তারা পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে এবং বিভিন্ন ধরণের কার্য সম্পাদন করতে পারে। কিন্তু এত গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও, বিজ্ঞানীরা এখনও পুরোপুরি বুঝতে পারেননি যে এই প্রোটিনগুলি কীভাবে রূপান্তরিত হয়। এই রহস্য সমাধানের প্রচেষ্টায়, প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস (PNAS)-এ প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণাপত্রে এক নতুন তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন জন অরবান (মেরিল্যান্ড বিশ্বাবিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক) এবং তার সহ-লেখক অ্যান্ডি লিওয়াং (ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক)। অনেক রূপান্তরিত প্রোটিন তাদের আকৃতি পরিবর্তনের ক্ষমতাকে চালু করে দেওয়ার জন্য তাপমাত্রার পরিবর্তনের উপর নির্ভর করে, বিশেষ করে শীতল তাপমাত্রার উপর। এ তত্ত্ব যদি ঠিক হয়, তাহলে এর অর্থ হবে, এই প্রোটিনের রূপান্তর নিয়ন্ত্রণে তাপমাত্রার ভূমিকা মৌলিক। রূপান্তরিত প্রোটিন কীভাবে কাজ করে তা বুঝতে পারাটা জৈব চিকিৎসা গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে, যথা নতুন, জীবনরক্ষাকারী ওষুধের বিকাশ।

রূপান্তরিত প্রোটিন বিভিন্ন পরিবেশগত “ট্রিগার”-এর আকৃতি বদলে দেয় এটা জানা ছিল, যেমন অম্লতা বা জারণের পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় । কিন্তু অরবান এবং লিওয়াং-এর তত্ত্ব আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে। রূপান্তরিত প্রোটিনগুলি যেসব বিভিন্ন আকার ধারণ করতে পারে তার মধ্যে কেন একটি ভারসাম্য থাকে তা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছে এ তত্ত্ব। অরবান বলেন, ” রূপান্তরিত প্রোটিনের দুটি অবস্থার মধ্যে ভারসাম্য না থাকলে আকৃতি পরিবর্তন ঘটতে পারে না। আমাদের অনুমান, সেই ভারসাম্যের মূলে আছে তাপমাত্রা। আমরা মনে করি এটি এক ধরণের সর্বজনীন প্রক্রিয়া হতে পারে। “অরবান বলেছেন, এই অনুমানটি তাঁর সহ-লেখকের ২০২৩ সালের একটি পূর্ববর্তী গবেষণা দ্বারা অনুপ্রাণিত। তাতে দেখানো হয়েছিল, গবেষকরা ৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তুলনামূলকভাবে সংকীর্ণ পরিসরে তাপমাত্রার সামঞ্জস্য এনে একটি কৌশল-রূপান্তরিত প্রোটিনের ভাঁজ-করা অবস্থায় সামনের দিক আর পিছনের দিককে উলটে দিতে পেরেছেন । এই নতুন গবেষণাপত্রটিতে, অরবান এবং লিওয়াং ২৬ জোড়া রূপান্তরিত প্রোটিনকে জরিপ করেছেন যাদের নিয়ে আগে অধ্যয়ন করা হয়েছিল। তবে তখন এই তাপমাত্রা-নির্ভরতা তত্ত্বটি তাঁদের মাথায় ছিল না। তাঁরা বিশেষ করে হাইড্রোফোবিক (জল-প্রতিরোধী) যোগাযোগের বিষয়টি বিশ্লেষণ করেন। এই যোগাযোগ জল-প্রতিরোধী অঞ্চলে কাঠামোকে একসাথে ধরে রাখতে সাহায্য করে। গবেষকরা দেখেছেন যে প্রায় প্রতিটি প্রোটিন জোড়ার জল-প্রতিরোধী যোগাযোগের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য ছিল। আর এই পার্থক্যগুলি তাপমাত্রা-নির্ভর পরিবর্তনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। নিম্ন তাপমাত্রার অবস্থাগুলি কম জল-প্রতিরোধী যোগাযোগের সাথে যুক্ত থাকায় আরও নমনীয় অবস্থা তৈরি হয়েছিল, যা হয়তো আকৃতি পরিবর্তনে সহায়ক। অরবানের মূল প্রেরণা হল আকৃতি পরিবর্তনকারী প্রোটিনের অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়া সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া। তবে তিনি ভবিষ্যতের প্রয়োগ সম্পর্কেও আশাবাদী।

 

সূত্র: “Unveiling the cold reality of metamorphic proteins” by Andy LiWang and John Orban, 13 March 2025, Proceedings of the National Academy of Sciences.
DOI: 10.1073/pnas.2422725122

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × one =