রোমান সাম্রাজ্য যখন খ্যাতির শীর্ষে, তার প্রভাব স্থল, সমুদ্র, এমনকি আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে রোমান সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগে, বায়ু দূষণ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে গবেষকদের অনুমান, এর ফলে গ্রেট ব্রিটেন সহ বেশিরভাগ ইউরোপের মানুষের ব্যাপক স্নায়বিক ক্ষতি হয়েছে। আর্কটিক থেকে পাওয়া বরফের রেকর্ডের ভিত্তিতে, খ্রিস্টপূর্ব ১০০ থেকে ২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বায়ুমণ্ডলীয় বিষাক্ত সীসার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে কারণ এই সময়ে প্রথম রোমান সাম্রাজ্যে খনির কাজ, ধাতু গলানো শুরু হয়েছিল। আগেও গবেষণায় দেখা গেছে এই সময়ে বায়ুতে সীসার পরিমাণ সর্বাধিক ছিল। এই সময়ে রোমান সাম্রাজ্যে জন্মগ্রহণকারী একটি শিশুর রক্তে বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিশুদের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি সীসা থাকবে বলে গবেষকরা অনুমান করছেন। সীসা দূষণ আর মানুষের স্বাস্থ্যে তার প্রভাবের ওপর আধুনিক প্রমাণের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক গবেষকদের অনুমান রোমান স্বর্ণযুগে সমস্ত জনসংখ্যা জুড়ে প্রতি মানুষের আইকিউ ২.৫ থেকে ৩ পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছিল। গল, উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকা, আইবেরিয়া এবং ব্রিটানিয়া প্রদেশ সহ বেশিরভাগ রোমান সাম্রাজ্যে জুড়ে এই ঘটনা ঘটে।
২ থেকে ৩ পয়েন্টের আইকিউ হ্রাস খুব বেশি না হলেও তা যদি সমগ্র ইউরোপীয় জনসংখ্যা জুড়ে হয়, তবে তা বেশ গুরুতর বলে জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেসার্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্নো অ্যান্ড আইস হাইড্রোলজিস্ট নাথান চেলম্যান। তিনি জানিয়েছেন, বায়ুতে আনুমানিক সীসা দূষণের ভিত্তিতে আই কিউ হ্রাসের মান নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সীসার পাইপ ও জলের পিপে থেকে সরাসরি সীসা অভিজাত ও শহুরে রোমানদের মুখে গিয়ে শরীরে বিষাক্ততা সৃষ্টি করত। ডেনমার্ক, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রিয়া এবং সুইজারল্যান্ডের ক্লাইমেটোলজিস্ট এবং এপিডেমিওলজিস্টরা জানিয়েছেন, বড়ো আকারের খননকার্য এবং সীসা/রৌপ্য আকরিকের প্রক্রিয়াকরণের ফলে সমস্ত ইউরোপীয় মানুষ, তাদের পশুসম্পদ, কৃষিক্ষেত্র বহু শতাব্দী ধরে বায়ুমণ্ডলীয় সীসা দূষণের সংস্পর্শে এসেছিল। আর এই ধাতুগুলোই গ্রীক এবং রোমান অর্থনীতির ভিত্তি ছিল। বায়ু ও মাটির সীসা দূষণের ফল গ্রামীণ, অ-অভিজাত জনগোষ্ঠীর মধ্যে পড়ার সম্ভাবনাও প্রচুর ছিল। রক্তে বা শরীরে সীসা থাকা নিরাপদ নয়, তবে সীসার ঘনত্ব বেশি হলে, তার ফলাফলও মারাত্মক হবে। গবেষকদের অনুমান, রোমান সাম্রাজ্যে শিশুদের রক্তে সীসার মাত্রা ৩.৫ মাইক্রোগ্রাম/ ডেসি লিটার ছিল। ফলে তাদের স্নায়বিক সমস্যা হওয়ার কথা।
মহামারী সংক্রান্ত গবেষণায় বলা হয়, রক্তে সীসার মাত্রা ৩.৫ মাইক্রোগ্রাম/ ডেসি লিটার হলে শিশুদের আই কিউ টেস্টের ফল নিম্ন হয়, পরবর্তীতে এই শিশুদের বুদ্ধিমত্তা ও শেখার ক্ষমতা হ্রাস পায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, সীসা দূষণকে কখনও কখনও দেশের “দীর্ঘ সময় ধরে চলা মহামারী” হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ১৯৪০- র দশক থেকে, বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন, জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানোর জন্য সীসার সংস্পর্শে এসে অর্ধেক জনসংখ্যার আইকিউ কমে গেছে। গত চল্লিশ বছরে, সীসার উন্মুক্তি বেশ হ্রাস পেয়েছে। সীসা-ভিত্তিক পণ্য, সীসাযুক্ত পেট্রল নিষিদ্ধ হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের রক্তে সীসার মাত্রা প্রায় ০.৬ থেকে ০.৮ মাইক্রোগ্রাম/ ডেসিলিটার। এই গবেষণা পিএনএএস- তে প্রকাশিত হয়েছে।