রোমান স্থাপত্য কেন সময়ের সাথে নষ্ট হয়ে যায়নি

রোমান স্থাপত্য কেন সময়ের সাথে নষ্ট হয়ে যায়নি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌।
Posted on ২০ জুলাই, ২০২৩

প্রাচীন রোমানরা ছিলেন দক্ষ নির্মাতা, সুদক্ষ ইঞ্জিনিয়ার। তাদের এই বিস্ময়কর স্থাপত্য সম্ভবত নির্ভর করে একটি অনন্য নির্মাণ সামগ্রীর উপর যার নাম পোজোলানিক কংক্রিট, যা এতটাই মজবুত যে আজও রোমের বিভিন্ন স্থাপত্য অবিশ্বাস্যভাবে দাঁড়িয়ে আছে। প্যানথিয়ন, বিশ্বের বৃহত্তম গম্বুজ, যা প্রায় ২০০০ বছর পুরানো – পোজোলানিক কংক্রিটে তৈরি। কংক্রিটের এই বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী এর উপাদান- পোজোলানা বা আগ্নেয়গিরির ছাই এবং চুনের মিশ্রণ। পোজোলানা নামটি এসেছে ইতালীয় শহর পোজুলির নামানুসারে, যেখানে উল্লেখযোগ্যভাবে এই ছাই পাওয়া যেত। জলের সাথে দুটি উপাদান মিশ্রিত হয়ে শক্তিশালী কংক্রিট তৈরি করে। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি-র (এমআইটি) নেতৃত্বে গবেষকদের একটি আন্তর্জাতিক দল আবিষ্কার করেছে যে মিশ্রণের উপাদান যেমন কিছুটা আলাদা, তেমনি আলাদা ছিল উপাদান মেশানোর কৌশল।
এমআইটি-র পদার্থ বিজ্ঞানী অ্যাডমির ম্যাসিকের মতে মিশ্রণটির এত শক্তিশালী হওয়ার কারণ হতে পারে ছোটো ছোটো সাদা চুনের দলা যা প্রথমে দেখে মনে হয় যেন মিশ্রণে ঠিকভাবে মেশানো হয়নি। ম্যাসিক ও অন্যান্য গবেষকের দল চুনের ওই দলাগুলো ভালোভাবে অধ্যয়ন করতে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেন যেমন ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপি, শক্তি-বিচ্ছুরণকারী এক্স-রে স্পেকট্রোস্কোপি, পাউডার এক্স-রে ডিফ্র্যাকশন এবং কনফোকাল রমন ইমেজিং। চুনের ধরন নিয়ে গবেষকদের মনে প্রশ্ন জাগে। পোজোলানিক কংক্রিটে চুন ব্যবহার করা হয়। প্রথমত, চুনাপাথরকে খুব বেশি তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করে প্রতিক্রিয়াশীল কস্টিক পাউডার বা কলিচুন বা ক্যালসিয়াম অক্সাইড তৈরি করা হয়। জলের সাথে কলিচুন মিশিয়ে চুন বা স্লেকড লাইম বা ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইড উৎপন্ন হয় যা কম প্রতিক্রিয়াশীল। তত্ত্ব অনুসারে, প্রাচীন রোমানরা পোজোলানার সাথে স্লেকড লাইম মেশাতো। তাদের মতে সম্ভবত রোমান কংক্রিট খুব উচ্চ তাপমাত্রায় পোজোলানা এবং জলের সাথে সরাসরি কলি চুন মিশিয়ে তৈরি করা হয়েছিল এবং এই “হট মিক্সিং”-এর ফলে চুন বা লাইম ক্লাস্ট তৈরি হয়েছিল। লাইম ক্লাস্ট কংক্রিটকে অসাধারণ স্ব-নিরাময় ক্ষমতা দেয়। যখন কংক্রিটে ফাটল তৈরি হয়, তখন জল প্রবেশ করে ও তা লাইম ক্লাস্টের দিকে গড়িয়ে যায় এবং চুনের সাথে বিক্রিয়া করে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ একটি দ্রবণ তৈরি করে যা শুকিয়ে ক্যালসিয়াম কার্বনেট হিসাবে শক্ত হয়ে যায়। এর ফলে ফাটলটিও জুড়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − 14 =