
সুন্দরবনের বাসিন্দাদের মতো আইসল্যান্ডের রেইকিয়ানেস বদ্বীপের লোকেরা সচরাচর সুনামি কিংবা ঘূর্ণিঝড় নিয়ে দুশ্চিন্তা করে না। তাদের সারাক্ষণের ভয় মাটি-ফুঁড়ে বেরিয়ে-আসা আগ্নেয়গিরির লাভা নিয়ে। মাছ-ধরার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত পরিচিত এবং ব্লু লাগুন-এর জন্য প্রসিদ্ধ শহর গ্রিন্ডাভিক-এর কাছেই আছে চ্যাপ্টা-মাথা সুঁধুঁকুর নামক আগ্নেয়গিরি। ২০২৩ সালের পর থেকে গ্রিন্ডাভিক-এর বাসিন্দাদের একের পর উদ্গিরণের মোকাবিলা করতে হয়েছে। একেবারে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই এর আবির্ভাব হয়। ঘরবাড়িগুলো ধ্বংস হওয়ার ঝুঁকি দেখা দেখা যায়।
কিন্তু এতদিনে ওখানকার অধিবাসীরা একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে ফাইবার-অপটিক কেব্ল প্রযুক্তির সৌজন্যে। অনেক দিন ধরেই এ প্রযুক্তি একটু একটু করে গড়ে উঠছিল। এর সুবাদে লোকেরা এখন আগাম আভাস পেয়ে যাবে আসন্ন লাভাস্রোত কখন মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসবে। ইদানীং কালে আগ্নেয়গিরির সক্রিতার বাড়াবাড়ি বিজ্ঞানীদের সামনে একটা সুযোগ এনে দিয়েছে। তাঁরা উদ্গিরণের ওপর নজরদারি করার একটা নতুন প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করার সুযোগ পেয়ে গেলেন। এর নাম ডিস্ট্রিবিউটেড অ্যাকাউস্টিক সেন্সিং (ডি এ এ)। এই প্রযুক্তিতে উজ্জ্বল লেজার রশ্মিকে নিক্ষেপ করা হয় ফাইবার অপটিক কেবলের মধ্যে। এই কেবলগুলো খুব উন্নত মানের, যে ধরণের কেবলের মধ্যে দিয়ে অতি-দ্রুত ইন্টরনেট সংকেত চলাচল করে। স্পন্দনগুলো কেবলের মধ্য দিয়ে চলচল করবার সময় আলোর দশায় পরিবর্তন ঘটে। সেই পরিবর্তিত দশা গবেষক-দলের নজরে পড়ে আর তা থেকে তাঁরা স্পন্দনগুলো চরিত্র কেমন সে বিষয়ে তথ্য ছেঁকে নিতে পারেন।
জিয়াশুয়ান লি, এতোরে বিয়ন্দি, ইলাইয়াস রাফ্ন হেমিসন, সিমোনে পিউএল, ঝোংঝেন ঝান সহ আরও ন-জন বিজ্ঞানী এ বিষয়ে গবেষণা করেছেন। ২০২৩-এর শেষের দিকে এঁরা ১০০ কিলোমিটার লম্বা একটা ফেলে-রাখা কেব্ল নিয়ে একটা সিস্টেম বানিয়ে টানা এক বছর ধরে এক নাগাড়ে উপাত্ত (ডেটা) রেকর্ড করে চলেন। এই উপাত্ত-সমষ্টি কাজে লাগিয়ে তাঁরা স্পন্দনগুলোকে ‘পাঠ’ করার একটা প্রণালী বার করেন। মটি ফুঁড়ে উদ্গিরণ উঠে আসবার আগে সেই প্রণালীতে সতর্কবার্তা পাওয়া যায়। আধ ঘণ্টা আগে থেকে শুরু করে কয়েক ঘণ্টা আগে। নতুন এই ডি এ এস প্রযুক্তির সাহায্যে মাটির নীচের এমন অনেক ক্রিয়াকাণ্ডর খবর পাওয়া গেছে যা আগে জানা ছিল না। এর ফলে গবেষকরা সাধারণভাবে আগ্নেয়গিরির ক্রিয়াকলাপ আরো ভালো করে বুঝতে পারবেন। সহ-গবেষক ঝোংওয়েন ঝান বলেছেন, ‘এই ডি এ এস প্রযুক্তি আমাদের এমন সব জিনিস দেখবার সামর্থ্য দিয়েছে যা আগে আমারা দেখতে পেতাম না’। বেটি মুর ফাউন্ডেশন, আমেরিকার ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন এবং সেন্টার ফর জিও-মেকযানিক্স অ্যান্ড মিটিগেশন অব জিও-হ্যাজার্ড্স প্রভৃতি সংস্থার সহায়তায় এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে।
সূত্র: Minute-scale dynamics of recurrent dike intrusions in Iceland with fiber-optic geodesy, Science 24 April 2025