লা নিনার কারণে বাড়তে চলেছে বৃষ্টিপাত ও ঠান্ডা

লা নিনার কারণে বাড়তে চলেছে বৃষ্টিপাত ও ঠান্ডা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৫ জুলাই, ২০২৪

পৃথিবী পর্যবেক্ষণের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্পেস প্রোগ্রামের অন্তর্গত কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (সিথ্রিএস) সম্প্রতি জানিয়েছে যে “অনুকূল” লা নিনা পরিস্থিতি আগস্ট-সেপ্টেম্বর নাগাদ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তারা এও জানিয়েছে যে এই বছরের শুরু থেকে এল নিনোর শক্তি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে। সিথ্রিএস বলেছে যে পূর্ব নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগরে তাপমাত্রা গড়ের নীচে ছিল, যা লা নিনার ইঙ্গিত দিচ্ছে, তবে সমুদ্রের উপর বায়ুর তাপমাত্রা অনেক অঞ্চলে অস্বাভাবিকভাবে বেশি রয়েছে। জানা গেছে যে মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরের পৃষ্ঠের কাছাকাছি গড় তাপমাত্রা সমুদ্রতলের গড় তাপমাত্রার চেয়ে সামান্য বেশি থাকে। অন্যদিকে ভারতের আবহাওয়া বিভাগও (আইএমডি) দেশে আসন্ন বর্ষা মরসুমে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে।
‘এল নিনো’ আর ‘লা নিনা’ কী, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে অনেকের মনে। পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূল ঘেঁষে পেরু, ইকুয়েডর বরাবর কোনও কোনও বছর ডিসেম্বর মাস নাগাদ এক প্রকার দক্ষিণমুখী উষ্ণ স্রোতের সৃষ্টি হয়। এরই নাম ‘এল নিনো’। পেরু, ইকুয়েডর উপকূলেই মাঝেমাঝে এল নিনোর বিপরীত একটি শীতল স্রোত সৃষ্টি হয়। তার নাম ‘লা নিনা’। দুই স্রোতের প্রভাব পড়ে বিশ্বের আবহাওয়ায়। এল নিনো সক্রিয় হলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ে আর তা দুর্বল হলে বিপরীত প্রতিক্রিয়ায় বাড়তে থাকে শীতলতা। তাকেই বলে লা নিনা। এল নিনো আর লা নিনা দুটি স্প্যানিশ শব্দ যার অর্থ যথাক্রমে ‘ছোটো বালক’ এবং ‘ছোটো বালিকা’। পর্যবেক্ষণ করে জানা গেছে দুর্বল হচ্ছে এল নিনো। তাই এ বার ঋতুচক্রের উপর প্রভাব বাড়ছে লা নিনার। লা নিনার পরিস্থিতি যখন দেখা দেয় তখন সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। যা সারা বিশ্বের তাপমাত্রাকে প্রভাবিত করে। এবছর জুন থেকেই ভারতে লা নিনার প্রভাব দেখা যাবে। আর এর প্রভাবে শুধু বেশি বৃষ্টিই নয়, বেশি ঠান্ডা পড়ারও সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, গত বছরের জুনে শুরু হওয়া শক্তিশালী এল নিনোর পরে লা নিনার প্রভাব দেখা যাবে। তবে এল নিনো থেকে সরাসরি লা নিনা পরিস্থিতি হয় না। তার মাঝে থাকে এনসো স্টেজ। আর এই এনসো স্টেজ তৈরি হয়েছে। তারপরে, লা নিনা অবস্থার উদ্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং এর প্রভাব আগস্ট থেকে কার্যকর হতে পারে। লা নিনার কারণে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ভারত ব্যতীত, বাকি সমস্ত অঞ্চলে স্বাভাবিক বা তার বেশি মৌসুমী বৃষ্টিপাত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারী বর্ষণের ফলে কিছু অঞ্চলে নদীতে এবং শহরাঞ্চলে বন্যা, কাদাধস, ভূমিধস এবং মেঘভাঙা বৃষ্টিপাত হতে পারে। ভারতের পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে, লা নিনার কারণে গড় মৌসুমি বৃষ্টিপাত কম হবে তবে বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা আরও বলেছে যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এল নিনো এবং লা নিনার যুগলবন্দীতে চরম আবহাওয়ার তীব্রতা এবং ফ্রিকোয়েন্সিকে প্রভাবিত করতে পারে।