লুপ্তপ্রায় গাছ সংরক্ষণ ও গাছ সংরক্ষণ ও উৎপল

লুপ্তপ্রায় গাছ সংরক্ষণ ও গাছ সংরক্ষণ ও উৎপল

অর্পন নস্কর
Posted on ৫ জুন, ২০২২

হুগলি জেলার রিষড়ার বাসিন্দা উৎপল দেবনাথ ব্যক্তিগত উদ্যোগে শুরু করেছেন এক প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা। গত প্রায় তিন বছর ধরে বিভিন্ন হারিয়ে যেতে বসা গাছকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করছেন উৎপল ও তাঁর কয়েকজন সহযোগী বন্ধু মিলে। শুরুটা হয়েছিল নেহাৎই গাছ লাগানো এবং বাড়ির একচিলতে ছাদে একটি শৌখিন বাগান করার মধ্যে দিয়ে। তারপর মাথায় আসতে থাকে বিভিন্ন পরিকল্পনা। সামাজিক মাধ্যমে একটি গ্রুপের মাধ্যমে আস্তে আস্তে গাছপালাতে আগ্রহী মানুষকে একত্রিত করতে থাকেন। এরপর উৎপল সামাজিক মাধ্যমের ঐ গ্রুপেই শুরু করেন বিভিন্ন গাছ চেনাবার প্রক্রিয়া। ‘গাছেদের কথা’ নামে একটি পত্রিকাও প্রকাশ করেছেন তিনি।

আমাদের চারপাশে যেসব গাছ হয়তো এককালে অহরহ দেখা যেত, কিংবা আমরাও সহজ পাঠের মতো শিশু পাঠে বা অন্য কোথাও যেসব গাছের নাম পড়েছি কিন্তু দেখা যায় না আজকাল যেসব গাছ তেমনই হারিয়ে যেতে বসা গাছের চারা বা বীজ সংগ্রহ করে, সযত্নে তাকে রক্ষা করা ও সংরক্ষণের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন উৎপল। গত দু তিন বছরে রসুনলতা, নীলমনি লতা, ফিডেল উড বা সরস্বতী চাঁপা ইত্যাদি গাছকে সংগ্রহ করে সংরক্ষণের জন্যে ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন গাছ আগ্রহী মানুষজনের মধ্যে, জানাচ্ছেন উৎপল। এছাড়াও মেষশৃঙ্গি, অশোক, মাদার, ব্লু জ্যাকারাণ্ডা বা নীলকন্ঠ ইত্যাদি গাছের চারা সংগ্রহ করেছেন তিনি। তমাল এবং ঈশ্বরীমূল গাছের বীজ সংগ্রহ করেছেন। তা থেকে চারা তৈরি করে ছড়িয়ে দেবেন সেসব গাছ। এছাড়াও হামজাম, বৈচিকুল, বনকাঁঠাল, কুর্চি, বরুন, বয়রা, গুটি আতা ইত্যাদি গাছের চারা বা বীজ সংগ্রহের প্রচেষ্টায় আছেন তিনি।

স্থানীয় স্কুল ক্লাবের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রাথমিক ভাবে গাছের চারা সংরক্ষণের কাজে যুক্ত আছেন তিনি। এছাড়াও উৎপল বলেছেন কিছু পরিকল্পনার কথা। বিশেষত যে পরিকল্পনায় স্কুল ছাত্রদের এবং সাধারণ মানুষকে গাছ সংরক্ষণে উৎসাহী করে তোলা যায়। যেমন, স্কুল ছাত্ররা পাঠ্য বইতে যেসব দেশী গাছের কথা পড়ে অথচ চাক্ষুষ দেখার সুযোগ হয় না, এমন গাছের চারা স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়ে বিদ্যালয় চত্বরে ছাত্রদের মাধ্যমেই তার রক্ষণাবেক্ষণ। কিংবা বাংলার সংস্কৃতির সাথে মিলিয়ে বিষয় ভিত্তিক বাগান তৈরিতে উৎসাহ দান। যেমন, বৈষ্ণব সাহিত্যে যে গাছের কথা পাওয়া যায়, বা হাল আমলের রবীন্দ্রনাথের প্রাইমার গ্রন্থ সহজপাঠে, বা বিভূতিভূষণের আরণ্যকে যেসব গাছের কথা পাই, সেসব গাছ, ক্যাটাগরি করে সহজ পাঠ, বিভূতিভূষণ, বা বৈষ্ণব সাহিত্যের গাছ এমন নাম দিয়ে বাগান তৈরিতে উৎসাহ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে উৎপলের।