লেজার রশ্মির সাহায্যে নানা স্থানের পুরোনো ঐতিহাসিক বস্তু আবিষ্কৃত হয়ে চলেছে। লেজার রশ্মি ব্যবহার করে নানা স্থানে পুরোনো মায়া সভ্যতার নিদর্শন দেখা গেছে। এবার মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা লেজার ব্যবহার করে মাটিতে লুকিয়ে পুঁতে রাখা বোম বা ল্যান্ড মাইন খুঁজে বের করার দিশা দেখিয়েছেন। সাধারণত প্রাণহানি ও ক্ষয় ক্ষতি ঘটানো এই বিপজ্জনক বস্তুর খোঁজ পাওয়া যেমন সময়-সাপেক্ষ তেমন খরচ সাপেক্ষ। ন্যাশনাল সেন্টার ফর ফিজিক্যাল অ্যাকোস্টিকসের প্রধান বিজ্ঞানী ব্যাচেস্লাভ আরানচুক, জাপানের ওসাকায় অনুষ্ঠিত অপটিকা লেজার কংগ্রেস অ্যান্ড একজিবিশন-এ লেজার মাল্টিবিম ভাইব্রেশন সেন্সর প্রযুক্তির ওপর তার গবেষণা উপস্থাপন করেন। আরানচুকের লেজার ভাইব্রেশন সেন্সিং প্রযুক্তি আগের কৌশলগুলোর তুলনায় অনেক দ্রুত ল্যান্ডমাইন শনাক্ত করতে পারে।
বিশ্বব্যাপী ১১ কোটির বেশি সক্রিয় ল্যান্ডমাইন রয়েছে, ২০২২ সালে পূর্ববর্তী যুদ্ধের সময়ে মাটিতে পোঁতা ল্যান্ডমাইন থেকে ৪৭১০ জন আহত বা নিহত হয়েছে। ল্যান্ডমাইনে নিহতদের মধ্যে ৮৫% -এর বেশি সাধারণ মানুষ যার মধ্যে অর্ধেক সংখ্যক শিশু। বিশ্বব্যাপী সত্তরটা দেশ, যা বর্তমান এবং প্রাক্তন যুদ্ধক্ষেত্র এখনও সক্রিয় ল্যান্ডমাইনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করে। ল্যান্ডমাইন তৈরি করা সহজ আর প্রত্যেকটার জন্য মাত্র ২৫০ টাকার মতো খরচ পড়ে কিন্তু ল্যান্ডমাইন খুঁজে তাকে নিষ্ক্রিয় করতে ৮৫০০০ টাকা অবধি খরচ হতে পারে। আরানচুক বলেন, গতানুগতিক শনাক্তকরণ পদ্ধতিতে মেটাল ডিটেক্টর হাতে ধরে ল্যান্ডমাইন খোঁজা হয়, তা যেমন বিপজ্জনক তেমন সময়সাপেক্ষ। আর বর্তমানে প্লাস্টিকের ল্যান্ডমাইন পাতা হয়, যা খুঁজে বের করতে মেটাল ডিটেক্টর আর গ্রাউন্ড-পেনিট্রেটিং রাডার কার্যকর নয়।
গবেষকদের এই প্রযুক্তিতে এক সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে কম্পনের ভিত্তিতে ভূমির একটা মানচিত্র তৈরি হয়। এটার জন্য একটা ৩৪ x ২৩ ম্যাট্রিক্স বিমের লেজার আলোকসজ্জা ব্যবহার করে মোটামুটিভাবে একটা আয়তক্ষেত্রের আকৃতি তৈরি করা হয়। মাটিতে পোঁতা ল্যান্ডমাইন আশেপাশের মাটির থেকে আলাদা লাল আলোর পিন্ডের মতো একটা কম্পমান চিত্র তৈরি করে। ল্যান্ডমাইন শনাক্তকরণ ছাড়াও এই প্রকৌশল ব্রিজ ও নানা স্থাপত্যের মূল্যায়নে, বায়োমেডিক্যাল প্রয়োগে লাগানো যেতে পারে বলে গবেষক জানিয়েছেন।