লেজার রশ্মির সাহায্যে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের তথ্য জানা

লেজার রশ্মির সাহায্যে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের তথ্য জানা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ জুলাই, ২০২৩

আমরা যখন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত -এর খবর শুনতে পাই, তখন আমাদের সেই অঞ্চলের মানুষদের নিয়ে চিন্তা হয়। প্রকৃতপক্ষে, সারা বিশ্বে প্রতি দশজনের মধ্যে একজন সক্রিয় আগ্নেয়গিরির ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে বাস করেন, তাদের উর্বর মাটিতে চাষ করেন বা তাদের দর্শনীয় প্রাকৃতিক শোভা পরিদর্শন করেন। অগ্ন্যুৎপাতের চালক শক্তি বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জানা প্রয়োজন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হচ্ছে কেন? কিভাবে বিস্ফোরণ বিবর্তিত হয়? এটা কখন শেষ হবে?
সায়েন্স অ্যাডভান্সেস-এ ৫ জুলাই তেরেসা উবাইড, সহযোগী অধ্যাপক – ইগনিয়াস পেট্রোলজি/ভলকানোলজি, কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়; অ্যালিস ম্যাকডোনাল্ড, পিএইচডি ছাত্র, কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং জ্যাক মুল্ডার, লেকচারার, অ্যাডিলেড বিশ্ববিদ্যালয় – এর প্রকাশিত নতুন গবেষণাতে সময়ের সাথে সাথে বিস্ফোরিত ম্যাগমার রাসায়নিক গঠন জানতে লেজার প্রযুক্তি প্রয়োগ করে তা অধ্যয়ন করা হয়েছে।
ম্যাগমার রাসয়নিক গঠন, তাদের তরলতা, বিস্ফোরণ ঘটানোর ক্ষমতা ও তার থেকে বিপদের সম্ভাবনা বোঝা যায়, তাই গবেষকরা বলছেন, তাদের কাজের ফলে ভবিষ্যতে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের বিবর্তন পর্যবেক্ষণ করে পূর্বাভাস দেওয়া যেতে পারে।
ম্যাগমা গলিত অবস্থায় তরল, গ্যাসীয় এবং যখন পৃথিবী পৃষ্ঠে গড়িয়ে যাওয়ার সময় ম্যাগমার তাপমাত্রা কমতে থাকে তখন স্ফটিকআকৃতি আকার তৈরি হয়।
যখন ম্যাগমা লাভা প্রবাহে পরিণত হয়, তখন এটা গ্যাসীয় যাতে জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য যৌগ থাকে, এটা পরবর্তী সময়ে ঠান্ডা হয়ে আগ্নেয় শিলায় পরিণত হয়।
গলিত ম্যাগমা আলাদা করার জন্য, তারা অতিবেগুনী লেজার রশ্মি ব্যবহার করেছেন, যাতে বৃহত্তর স্ফটিকগুলির মধ্যে রক ম্যাট্রিক্স বিস্ফোরিত করা যায়। তারপর তারা আগ্নেয়গিরির ম্যাট্রিক্সের রাসায়নিক গঠন নির্ধারণের জন্য ভর স্পেকট্রোমেট্রি দ্বারা লেজার-উত্পন্ন কণাগুলি বিশ্লেষণ করেছেন। এই পদ্ধতি চিরাচরিত পদ্ধতির তুলনায় অনেক দ্রুত ও কম পরিশ্রমসাধ্য উপায়ে রাসায়নিক বিশ্লেষণের করে।
তাদের গবেষণার ক্ষেত্র ছিল ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের লা পালমায় ২০২১ সালের অগ্ন্যুৎপাতের স্থল যা ওই দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত। এটা চলেছিল, ২০২১ – এর সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত, এখানে মোট ১৬০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার লাভা ১২ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি জমি জুড়ে ছড়িয়েছিল। এতে ১৬০০ -র বেশি বাড়ি ধ্বংস হয়েছিল, ৭০০০ লোককে সরিয়ে নিতে বাধ্য হতে হয়েছিল।
গবেষকরা জানিয়েছেন, তাদের কাজের লক্ষ্য ভবিষ্যতে অগ্ন্যুৎপাতের সময় সংগৃহীত আগ্নেয়গিরির নমুনা পরীক্ষাগার সরঞ্জাম ব্যবহার করে পরীক্ষা করা। এর ফলে অগ্ন্যুৎপাতের বিবর্তন জানা যাবে, কেন তারা শুরু হয়েছে এবং কখন শেষ হবে তা বোঝা যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 + 20 =