শনির বাড়ির দরজায়

শনির বাড়ির দরজায়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৬ মার্চ, ২০২২

শনি গ্রহ (Saturn) এবং তার চারপাশের বলয় বা রিং (Saturn Ring)– এই নিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে আগ্রহ বরাবরই বেশি। পৃথিবীতে থাকা বিভিন্ন টেলিস্কোপ (Telescope) এবং সেই সঙ্গে বিভিন্ন স্পেস টেলিস্কোপ (Space Telescope), দুইয়ের সাহায্যেই শনি গ্রহ এবং তার বলয়কে দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করছেন বৈজ্ঞানিকরা। এই গ্রহ এবং তাকে আবর্ত করে থাকা বলয় নিয়ে রহস্য রয়েছে সবসময়ই। আর সেই বিষয়ে রয়েছে কৌতূহলও। সাধারণত পৃথিবী থেকে মহাকাশের অন্যান্য গ্রহকে কেমন দেখতে লাগে সে ব্যাপারে আমাদের ধারণা দিয়ে থাকেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। কিন্তু শনি গ্রহ থেকে বা ওই গ্রহের খুব কাছাকাছি অবস্থান থেকে কোনও মহাকাশযান বা স্পেস টেলিস্কোপ পৃথিবীতে ঠিক কীভাবে দেখতে পাবে, এবার সেই ছবিই প্রকাশ করেছে মার্কিন স্পেস এজেন্সি।
মহাবিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহ হল স্যাটার্ন বা শনি। বৃহস্পতির পরেই এর স্থান। সম্প্রতি এই শনি গ্রহ এবং তার বলয়ের খুব কাছ থেকে তোলা পৃথিবীর একটি ছবি শেয়ার করেছে নাসা। শনি গ্রহের তুলনায় কেমন দেখতে লাগছে পৃথিবীকে? অনেক দূরে অতি ক্ষুদ্র একটি আলোর বিন্দু দেখা গিয়েছে। যদিও সেই আলোকবিন্দু যথেষ্ট উজ্জ্বল। কিন্তু অবয়বের আকার ছোট হওয়ায় সুস্পষ্ট নয়। কিন্তু অত দূরে থাকলেও উজ্জ্বল আলোকবিন্দু কিন্তু বোঝা যাচ্ছে। জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালে Cassini spacecraft- এর মাধ্যমে এই ছবি তোলা হয়েছিল।
পৃথিবী থেকে শনি গ্রহের দূরত্ব ১.৬১ বিলিয়ন কিলোমিটার। জানা গিয়েছে,এ ই ছবি তোলা হয়েছে অন্তত ১.৪ বিলিয়ন কিলোমিটার দূরত্ব থেকে। ১৯৯৭ সালে নাসা Cassini মহাকাশযান লঞ্চ করেছিল। ১৩ বছর ধরে এই মহাকাশযান এবং এর সঙ্গে থাকা Huygens শনি গ্রহকে পর্যবেক্ষণ করে অন্বেষণের চেষ্টা চালিয়েছে। আসলে শনি গ্রহ হল এক সুবিশাল দুনিয়া যেখানে প্রবল ঝড় এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ও তার icy moons লক্ষ্য করা যায়। মূলত এরাই শাসন চালায় শনি গ্রহের উপর। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শনি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে কার্যত ঝাঁপ দিয়েছিল। এর আগেই বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে এই মহাকাশযানের অন্তিম যাত্রায় তাকে শনি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে পাঠানো হবে। মহাকাশযান Cassini পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্তও বৈজ্ঞানিকদের তথ্য পাঠিয়ে গিয়েছে। মার্কিন স্পেস এজেন্সির নাসা এবং ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি ইএসএ আর ইতালীয় স্পেস এজেন্সি (এএসএ) একত্রিত হয়ে এই অভিযান চালিয়েছিল।
সম্প্রতি নাসা শনিগ্রহের কাছ থেকে পৃথিবীর যে ছবি প্রকাশ করেছে জানা গিয়েছে সেই ছবি, শনি গ্রহের বাইরের বলয়ের আলোকিত অংশ থেকে তোলা হয়েছে। ওই বলয় বা রিং প্লেনের ২০ ডিগ্রি নীচ থেকে পৃথিবীর এই ছবি তোলা হয়েছে। নাসা জানিয়েছে, এই ছবি তোলার জন্য লাল, সবুজ এবং নীল রঙের স্পেক্ট্রাল ফিল্টার একসঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে। যার ফলেই তৈরি হয়েছে প্রাকৃতিক রঙের দৃশ্যমানতা। এই নিয়ে মাত্র তৃতীয় বার সৌরমণ্ডলের বাইরে থেকে পৃথিবীর ছবি তোলা হয়েছে।