শরীর কীভাবে ‘ফাইট মোড’-কে নিয়ন্ত্রণ করে

শরীর কীভাবে ‘ফাইট মোড’-কে নিয়ন্ত্রণ করে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৫ জানুয়ারী, ২০২৫

কর্টিসল মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করার একটি হরমোন। শরীরে কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পেলে মানসিক চাপ বেড়ে যায়। গ্লুকোকোর্টিকয়েড কর্টিসোন প্রাকৃতিকভাবে আমাদের শরীরে কর্টিসল হিসাবে উপস্থিত থাকে। কর্টিসল শর্করা এবং ফ্যাট জাতীয় পদার্থের বিপাকে প্রভাব ফেলে এবং রক্তচাপ ও শ্বসন এবং হৃদস্পন্দন সহ অন্যান্য ক্রিয়াকেও প্রভাবিত করে। উচ্চ মাত্রায় উপস্থিত থাকলে কর্টিসল শরীরের ইমিউন সিস্টেমের ক্রিয়াকলাপে বাধা দেয়। কৃত্রিম গ্লুকোকোর্টিকয়েড ডেরিভেটিভস প্রদাহ রোধ করে। এটি শরীরে উপস্থিত প্রাকৃতিক পদার্থের চেয়েও বেশি কার্যকারী তাই ইমিউন সিস্টেম সংক্রান্ত প্রদাহজনিত রোগের চিকিত্সার জন্য এর ব্যবহার অনেক বেশি। তবে উচ্চ মাত্রায় এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য ব্যবহৃত হলে গ্লুকোকোর্টিকয়েড- ভিত্তিক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় যেমন উচ্চ রক্তচাপ, অস্টিওপরোসিস, ডায়াবেটিস এবং ওজন বৃদ্ধি। বিশেষ করে এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া শরীরের নিজস্ব কর্টিসল মাত্রার সাথে সম্পর্কিত। তাই গবেষকরা গ্লুকোকোর্টিকয়েডের কাজ দেখার চেষ্টা করেন। পূর্বে দেখা গেছে যে গ্লুকোকোর্টিকয়েড শরীরের বিভিন্ন কোশে বেশ কয়েকটি জিনকে সক্রিয় করে তোলে। তবে এই প্রক্রিয়াটির মাধ্যমে, তারা প্রধানত দেহে উপস্থিত রিসোর্স বা সংস্থানকে সক্রিয় করে৷ এই গবেষণায় গবেষকরা দেখিয়েছেন যে গ্লুকোকোর্টিকয়েড শুধুমাত্র ইমিউন কোশে জিনের অভিব্যক্তিকে প্রভাবিত করে না, এটি কোশের পাওয়ার হাউস, মাইটোকন্ড্রিয়াকেও প্রভাবিত করে। অধ্যয়নের জন্য, গবেষকরা এক ধরনের ইমিউন কোশ বা ম্যাক্রোফাজের সাহায্য নেন যা ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার মতো অনুপ্রবেশকারীদের নির্মূল করতে সহায়তা করে। এই কোশগুলো শরীরের ইমিউন সিস্টেমের কাজের উপর প্রভাব ফেলে। তারা দেখেন গবেষণাগারে ইঁদুরের ক্ষেত্রে জিনের অভিব্যক্তি প্রভাবিত করা ছাড়াও, গ্লুকোকোর্টিকয়েড প্রদাহজনক উদ্দীপনা থেকে শুরু হওয়া কোশের বিপাক প্রক্রিয়ার পরিবর্তনকেও প্রভাবিত করতে পারে। যখন ম্যাক্রোফাজের ‘ফাইট মোড অন’ রাখা হয়, তখন তারা তাদের কোশীয় শক্তিকে লাড়াইয়ের জন্য ব্যবহার করতে প্রস্তুত হয়। শক্তি সরবরাহ করার পরিবর্তে, তাদের মাইটোকন্ড্রিয়া অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি করে। গ্লুকোকোর্টিকয়েড এই প্রক্রিয়াটিকে বিপরীত করে, ‘ফাইট’ মোডটি আবার বন্ধ করে দেয়। ইটাকোনেট নামে একটি ক্ষুদ্র অণু এতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাইটোকন্ড্রিয়ায় ইটাকোনেট নামে প্রদাহ-রোধী পদার্থ স্বাভাবিকভাবে তৈরি হয়। ম্যাক্রোফাজ সক্রিয় হওয়ার সাথে সাথে ইটাকোনেট তৈরি করে যাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া কমে যায়। এর জন্য পর্যাপ্ত শক্তি প্রয়োজন হয়। যখন কোশের পাওয়ার হাউস সেই থেমে যাওয়া লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, তখন ইটাকোনেট উৎপাদনও কিছুক্ষণ পরে বন্ধ হয়ে যায়। স্বাভাবিক, স্বল্পমেয়াদী প্রদাহের ক্ষেত্রে, এই সময় কার্যকর কারণ ইতিমধ্যে ইমিউন প্রতিক্রিয়াও কমে যায়। কিন্তু যদি অবিরাম প্রদাহজনক উদ্দীপনা চলে সেক্ষেত্রে ইটাকোনেট উৎপাদন কমে গেলে সমস্যার সৃষ্টি হয় কারণ কোনও ইমিউন ‘ব্রেক’ থাকে না কিন্তু ইমিউন সিস্টেম কাজ করে চলে। ফলে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি হয়। আর এখানেই গ্লুকোকোর্টিকয়েডের ভূমিকা রয়েছে। মাইটোকন্ড্রিয়ার কাজ প্রভাবিত করে, তারা ম্যাক্রোফাজে ইটাকোনেট তৈরি ত্বরান্বিত করে, এর প্রদাহ-রোধী প্রভাব পুনরুদ্ধার করে। দুর্ভাগ্যবশত, ইটাকোনেট প্রদাহ-রোধকারী ওষুধ হিসাবে খুব উপযোগী নয় কারণ এটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তা ছাড়াও, মানুষের মধ্যে প্রক্রিয়াগুলো ইঁদুরের তুলনায় একটু বেশি জটিল। তাই গবেষকরা এমন এক নতুন সিন্থেটিক যৌগ সন্ধান করছেন যা ইমিউন কোশের ভিতরে মাইটোকন্ড্রিয়ার বিপাককে নিয়ন্ত্রণ করতে গ্লুকোকোর্টিকয়েডের মতোই কার্যকর, কিন্তু কম গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।