চুল পড়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল বংশগতভাবে চুল উঠে টাক পড়া। বিজ্ঞানীরা পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে বংশগতভাবে টাক পড়ার সমাধানের একটা নতুন চিকিত্সার উপায় খোঁজার চেষ্টা করছেন। এই গবেষণার সূত্রপাত শরীরে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক চিনি থেকে। চিনি প্রাকৃতিকভাবে শরীরে ডিএনএ গঠনে সহায়তা করে। এটা ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিডের ‘ডিঅক্সিরাইবোজ’ অংশ গঠন করে। শরীরের বাইরে প্রয়োগ করার সময় এই শর্করা কীভাবে ইঁদুরের ক্ষত নিরাময় করে তা অধ্যয়ন করতে গিয়ে, ইউনিভার্সিটি অফ শেফিল্ড এবং পাকিস্তানের কমস্যাটস ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা লক্ষ করেন, ইঁদুরের ক্ষতের চারপাশের রোম অন্য ইঁদুরদের তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গবেষকরা বিষয়টা খতিয়ে দেখতে আরও গবেষণা চালান।
গবেষকরা পুরুষ ইঁদুর নেন যাদের টেস্টোস্টেরনের জন্য রোমের ক্ষতি হয়েছে, তারপর তাদের পিঠের রোম সরিয়ে দেন। প্রতিদিন উন্মুক্ত ত্বকে, গবেষকরা ডিঅক্সিরাইবোজ চিনির জেল অল্প পরিমাণে লাগান। আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে, ইঁদুরদের এই অঞ্চলে লম্বা, পুরু রোম গজাতে থাকে। গবেষকরা দেখেন, ডিঅক্সিরাইবোজ জেল চুল পড়ার সাময়িক চিকিত্সায় ব্যবহৃত মিনোক্সিডিলের মতোই কাজ করে। শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিস্যু ইঞ্জিনিয়ার শিলা ম্যাকনিল জানান, তাদের গবেষণা থেকে বোঝা যাচ্ছে, চুলের ক্ষতির চিকিত্সায় চুলের বৃদ্ধির জন্য, চুলের ফলিকলে রক্ত সরবরাহ বাড়াতে প্রাকৃতিকভাবে ডিঅক্সিরাইবোজ চিনি ব্যবহার করা যেতে পারে। বংশগত সূত্রে প্রাপ্ত টাক, বা অ্যান্ড্রোজেনিক অ্যালোপেসিয়া, জেনেটিক, হরমোনের মাত্রা এবং বার্ধক্যজনিত কারণে হয়। তবে এই টাক পড়ার ধরন পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে আলাদা। এই ব্যাধিতে জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ পর্যন্ত প্রভাবিত হয়। এই অবস্থার চিকিত্সার জন্য মাত্র দুটো ওষুধ মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) অনুমোদিত, যার মধ্যে মিনোক্সিডিল একটা। গবেষকরা জানান, অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেসিয়া বা বংশগত কারণে টাকের চিকিৎসা চ্যালেঞ্জিং। ইঁদুরদের ওপর মিনোক্সিডিল ও ডিঅক্সিরাইবোজ চিনির জেল প্রয়োগ করে দেখা গেছে উভয় ক্ষেত্রেই কন্ট্রোল দলের তুলনায় ৮০-৯০ শতাংশ রোমের বৃদ্ধি হয়েছে। কেন ডিঅক্সিরাইবোজ চিনি রোমের বৃদ্ধি বাড়ায় তা এখনও জানা যায়নি। কিন্তু দেখা গেছে, যেখানে এই চিনির জেল প্রয়োগ করা হয়েছে, সেই অঞ্চলের ত্বকের কোশে রক্তবাহের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, চুলের গোড়ায় রক্ত সরবরাহ বেশি হলে চুল বেশি বৃদ্ধি পাবে।
এই গবেষণা পুরুষ ইঁদুরদের ওপর করা হয়েছে, প্রথমত তা স্ত্রী ইঁদুরদের মধ্যে করে দেখা হবে। এরপর মানুষের ক্ষেত্রেও যদি ডিঅক্সিরাইবোজ জেল কার্যকর প্রমাণিত হয়, তবে ভবিষ্যতে কেমোথেরাপির পরে অ্যালোপেসিয়া চিকিত্সা বা চুল, চোখের পাতা, ভ্রুর বৃদ্ধি উদ্দীপিত করতে এই জেল ব্যবহার করা যেতে পারে। এই গবেষণা ফ্রন্টিয়ারস ইন ফার্মাকোলজিতে প্রকাশিত হয়েছে।