শহরের পার্কে দাঁড়িয়ে কাঠবিড়ালিকে চিনেবাদাম ছুঁড়ে দেওয়া আমাদের অনেকেরই দৈনন্দিন আনন্দমুখর মুহূর্ত। এই সাধারণ অভ্যেসই যে শহুরে প্রাণীদের জীবনচক্রে এত বড় পরিবর্তন আনছে—তা নতুন গবেষণা না দেখালে বিশ্বাস করা কঠিন হতো। জাপানের ও বিহিরো অঞ্চলে তিন বছর ধরে পরিচালিত এক সমীক্ষা দেখিয়েছে, মানুষের দেওয়া অতিরিক্ত খাবার শহুরে লাল কাঠবিড়ালিদের প্রজননক্ষমতাকে গ্রামীণ এলাকার তুলনায় প্রায় এক-চতুর্থাংশ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী নগরায়নের ফলে বন্যপ্রাণীর বাসস্থল ক্রমে সংকুচিত হয়ে পড়ছে। অনেক প্রজাতি টিকে থাকতে না পেরে হারিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কাঠবিড়ালির মতো অভিযোজনশীল প্রাণীরা মানুষের সান্নিধ্যে নতুন জীবনধারা খুঁজে পাচ্ছে। পার্কে রাখা বাদাম, বীজ বা রুটির টুকরো—মানুষের এই সদিচ্ছার উপহার থেকেই শহুরে উদ্যানবাসীরা সারাবছর পায় নিরবচ্ছিন্ন ক্যালোরি। এটি তাদের বেশি শক্তি জোগায়—ডিম উৎপাদন থেকে শুরু করে গর্ভধারণ ও স্তন্যপান করানো পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে।
গবেষণার নেতৃত্বে থাকা রিতসুমেইকান বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ইউ তাকাহাতা জানান, পুষ্টিকর ও সহজলভ্য খাবার যেকোনো স্তন্যপায়ী মায়ের জন্য প্রজননের শক্ত ভিত। শহরের কাঠবিড়ালিরা ঠিক সেই সুবিধাটিই পাচ্ছে মানুষের কল্যাণে।
মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত তিন বছর ধরে গবেষকরা চারটি শহুরে পার্ক ও পাঁচটি বনভূমিতে চিহ্নিত স্ত্রী কাঠবিড়ালিদের প্রতিদিন পর্যবেক্ষণ করেন। তারা ছয়টি মানদণ্ডে তথ্য সংগ্রহ করেন—গর্ভধারণের হার, প্রথম ও শেষ প্রজননের বয়স, শিশু জন্মের সময়, টিকে থাকা ছানার সংখ্যা, এবং বছরে দ্বিতীয়বার প্রজননের সম্ভাবনা।
ফলাফলে দেখা যায়—শহরের কাঠবিড়ালিরা গ্রামীণ এলাকার তুলনায় এক মাস আগেই ছানা প্রসব করে এবং এক বছর বয়সেই প্রজনন শুরু করে; যেখানে বনাঞ্চলের কাঠবিড়ালিরা সাধারণত দুই বছর বয়সে মাতৃত্বে পা দেয়। আরও উল্লেখযোগ্য—শুধুমাত্র শহুরে স্ত্রীরাই বছরে দ্বিতীয়বার প্রজনন করেছে, এবং পর্যবেক্ষিত শহরের কাঠবিড়ালিদের ৪০ শতাংশই এই অতিরিক্ত সন্তান উৎপাদন করেছে, যা তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির গতিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে বহুগুণে।
পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে—শহরের কাঠবিড়ালিদের ওজনও বেশি, কারণ তারা সারাবছর গাছের বীজের পাশাপাশি মানুষের রাখা বাদাম পায়। উন্নত শারীরিক দশা—চর্বি ও মাংসপেশি—প্রজননে উল্লেখযোগ্যভাবে সহায়তা করে। এছাড়া শহরের হালকা শীত, রাতের কৃত্রিম আলো এবং বহুতল অট্টালিকাগুলোতে অতিরিক্ত বসবাসের সুযোগও তাদের প্রজননচক্রকে এগিয়ে দেয়।
গবেষক দল মনে করে, এই ফলাফল থেকে দেখা যায় কীভাবে সাধারণ মানবিক আচরণ—যেমন খাবার ছড়ানো—বন্যপ্রাণীর জীবন ইতিহাসকে পাল্টে দিতে পারে। যদিও অতিরিক্ত খাওয়ানো আবার রোগ ছড়ানো, দুর্ঘটনা বা প্রতিযোগিতা বাড়াতে পারে, তবু এই সমীক্ষা ইঙ্গিত দেয়, প্রাকৃতিক খাদ্যের কাছাকাছি উপাদান দিলে কাঠবিড়ালির মতো প্রাণীরা লাভবান হতে পারে।
সারকথা হল, শহুরে খাদ্যের অনিচ্ছাকৃত উপহারই আজ লাল কাঠবিড়ালিদের আরও দ্রুত, আরও সফল প্রজননে সহায়তা করছে।
সূত্র : Urban females experience better reproductive conditions than rural females in Eurasian red squirrels by Yu Takahata, Nobuyuki Kutsukake, et.al; published in the journal Mammalian Biology, 20th October,2025.
