শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে স্পর্শের প্রভাব

শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে স্পর্শের প্রভাব

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১০ এপ্রিল, ২০২৪

সারাদিনের খাটাখাটুনির পর যখন একদম শরীর অবসন্ন, সেই সময় কেউ হয়তো কাঁধে আলগা করে কয়েকটা চাপড় মারল অথবা কেউ জড়িয়ে ধরল, একটা ভালো লাগা বোধ নিজের অজান্তে তৈরি হয়ে যায়। স্পর্শ কী খুব শক্তিশালী মাধ্যম? কে বা কেমনভাবে স্পর্শ করছে তা কী গুরুত্বপূর্ণ? নেদারল্যান্ডস ইনস্টিটিউট ফর নিউরোসায়েন্স এবং ইউনিভার্সিটি হসপিটাল এসেনের সোশ্যাল ব্রেন ল্যাবের গবেষকরা এসব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য স্পর্শের ওপর বড়ো মাপের গবেষণা পরিচালনা করেছেন। স্পর্শ সত্যিই ভালো লাগার সাথে যুক্ত কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে প্রধান গবেষক প্যাকহাইজার বলেছেন, গবেষণায় বোঝা যাচ্ছে স্পর্শের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক ভালো লাগা তৈরি হয়, এর থেকে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ব্যথা, উদ্বেগ, বিষণ্নতা এবং চাপ হ্রাস পায়। যাদের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে স্পর্শ আরও ভালো কাজ করে।
গবেষণায় দেখা হয়েছিল, যদি ব্যক্তিকে আলিঙ্গন করার জন্য কোনো বন্ধু বা সঙ্গী না থাকে তবে অপরিচিত কেউ বা একটা মেশিনের স্পর্শে কী এই সাহায্য পাওয়া যাবে? কতবার কতক্ষণ ধরে স্পর্শে এই প্রভাব পড়বে? অধ্যয়নটি স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে যে ব্যক্তি আপনাকে স্পর্শ করছে, তারা কীভাবে আপনাকে স্পর্শ করেছে এবং তাদের স্পর্শের সময়কালের জন্য আলাদা প্রভাব পড়েনা। একজন থেরাপিস্টের দীর্ঘ ম্যাসাজ বন্ধুর দ্রুত আলিঙ্গনের মতোই কার্যকর হতে পারে। যত ঘন ঘন ব্যক্তিকে স্পর্শ করা হবে তার প্রভাব তত বেশি পড়বে। পরবর্তী প্রশ্ন ছিল মানুষের স্পর্শ দরকার কিনা। গবেষক ফ্রেডেরিক মিচন ব্যাখ্যা করেছেন, গবেষণায় দেখা গেছে বস্তু বা রোবটের স্পর্শ থেকেও শারীরিক সুস্থতা বাড়তে পারে। অনেক অসুস্থ মানুষ একাকী কিন্তু স্পর্শ-রোবট বা সাধারণ হালকা ওজনযুক্ত কম্বলও তাদের সাহায্য করতে পারে। তবে তিনি জানিয়েছেন, রোবট এবং বস্তুর স্পর্শজনিত সুবিধা মানসিক সুস্থতার ক্ষেত্রে বিশেষ কার্যকর নয়। উদ্বেগ বা হতাশার মতো মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাধির জন্য মানুষের স্পর্শের প্রয়োজন হতে পারে। তিনি বলেছেন এক্ষেত্রে সম্ভবত স্পর্শের সাথে আবেগের যোগ রয়েছে। রোবট নিয়ে কাজ করলেও পোষ্যের স্পর্শ থেকে মানুষের উপকার হচ্ছে কিনা বা পোষ্যরা উপকৃত হচ্ছে কিনা তা গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
গবেষকরা নবজাতকের ওপর স্পর্শের প্রভাব দেখেছিলেন। দেখা গেছে নবজাতকরাও স্পর্শ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে উপকৃত হচ্ছে বিশেষত বাবা-মায়ের স্পর্শ থেকে। গবেষকদের মতে কিছু দেশে সময়ের আগে জন্মের জন্য শিশু মৃত্যুর হার বেশি, যদি শিশু তার নিজের বাবা-মায়ের স্পর্শে বেশি উপকৃত হয় সেই ধারণা কাজে লাগিয়ে শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য বাস্তব সহায়তা দেওয়া সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × one =