শিং নেই তবু নাম তার গন্ডার

শিং নেই তবু নাম তার গন্ডার

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৫ জুন, ২০২৫

দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রুগার ন্যাশনাল পার্কে ঘটছে এক নিঃশব্দ বিপ্লব। গন্ডারদের বাঁচানোর লড়াইয়ে তাদের শিং কেটে ফেলা হচ্ছে। গন্ডারের তীক্ষ্ণ শিং-ই তো চোরাশিকারিদের লোভের উৎস। তাই তার শিং কেটে ফেলে শিকার কমানো এক অনিচ্ছাকৃত কিন্তু অবিশ্বাস্য রণকৌশলে পরিণত হয়েছে। ২০১৭-২৩, সাত বছরব্যাপী এক গবেষণা বলছে, যেসব সংরক্ষিত এলাকায় গন্ডারের শিং কাটা হয়েছে, সেখানে শিকারের সংখ্যা কমেছে ৭৮ শতাংশ। গবেষণাপত্রর প্রধান লেখক, দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববৈচিত্র্য বিজ্ঞানী ড. টিম কুইপার স্পষ্ট করে বলেন, “গন্ডারের পরিচিতিই তার শিং, তবু এটি অপসারণ করা একধরনের প্রয়োজনীয় কুকাজ। এটি খুবই কার্যকর। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে এটি শত শত গন্ডারের জীবন বাঁচিয়েছে।” শিংবিহীন গন্ডারে চোরাশিকারিদের আগ্রহ কম। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও চীনের বাজারে গণ্ডারের শিং খুব মূল্যবান, যা চিরাচরিত ওষুধে ব্যবহৃত। শিং নেই, তাই ঝুঁকিও নেই। গবেষণায় ক্রুগারের ১১টি সংরক্ষিত অঞ্চলের মধ্যে ৮টিতে শিং কাটা গন্ডারের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। এই ‘বিশৃঙ্গকরণ’ প্রক্রিয়া প্রতি ১-২ বছর অন্তর করতে হয়, কারণ শিং আবারও গজিয়ে যায়। প্রতিটি গন্ডারের চোখ বেঁধে, কান ঢেকে, অল্প সময়ের জন্য তাকে অচেতন করে, ১০ মিনিটের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। তবে প্রশ্ন থাকেই। প্রাণী অধিকার কর্মীরা ভাবেন, গন্ডারের নিজস্ব অস্ত্র কেড়ে নেওয়া কতটা ন্যায়সঙ্গত? কিছু বিজ্ঞানী বলেন, শিংবিহীন গন্ডার এলাকা-দখল ও খাবার সংগ্রহে দুর্বল হয়, বিশেষ করে কালো গন্ডাররা। তবু এখনও পর্যন্ত প্রজনন বা মৃত্যুহারের উপর এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায়নি। গন্ডার গবেষক ভেনেসা ডুথে-র ভাষায়, “আমরা যা জানি তা হল, শিং ছাড়ানোর সুবিধাগুলি আজ যে কোনও পরিবেশগত ক্ষতির চেয়ে বেশি।” এই গবেষণায় অংশ নেয় দক্ষিণ আফ্রিকার তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি, রেঞ্জার, সংরক্ষণ রিজার্ভ ম্যানেজার, WWF ও সেভ দ্য রাইনো ফাউন্ডেশন। তবু কুইপার মনে করিয়ে দেন, এটি কোনো চূড়ান্ত সমাধান হতে পারে না, এটি একটি সাময়িক ব্যবস্থা। প্রকৃত সমাধান হল চোরাশিকারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন, সামনের সারিতে থাকা রেঞ্জারদের আরও শক্তিশালী সহযোগিতা এবং বিশ্বব্যাপী সচেতনতা। আজ আফ্রিকার বুকে গন্ডারদের শিংহীন হয়ে ওঠা পরাজয়ের চিহ্ন নয়, বরং এক বিবর্তনী কৌশল। সেখানে অস্ত্র দিয়ে নয়, বুদ্ধি দিয়েই বাঁচে প্রাণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × five =