শিম্পাঞ্জিদের উপভাষা

শিম্পাঞ্জিদের উপভাষা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

আইভরি কোস্টের শিম্পাঞ্জিরা স্ত্রীদের সঙ্গমের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে নানা অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে শিম্পাঞ্জিদের বিভিন্ন দল কিছুটা ভিন্ন অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করে, ঠিক বিভিন্ন উপভাষার মতো। ২০ বছর আগে মানুষের একটি শিকারের ঘটনার পর একটি শিম্পাঞ্জি দল নির্দিষ্ট এই অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার বন্ধ করে দেয়। এটা প্রমাণ করে যে, মানুষের ক্রিয়াকলাপ অন্য প্রাণীর কৃষ্টির কিছু অংশকে ব্যাহত করতে পারে। মানুষের যেমন আলাদা আলাদা উচ্চারণ থাকে, ঠিক তেমনি চড়ুই পাখি, ফিঞ্চ এবং তিমি প্রভৃতি প্রাণীদের গানে আলাদা আলাদা উপভাষা থাকে। তারা এই গানগুলি অন্যদের কাছ থেকে শেখে, তাই প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব অনন্য সংস্করণ রয়েছে। আশ্চর্যজনকভাবে, আমাদের নিকটাত্মীয়, প্রাইমেটদের(শ্রেষ্ঠ বর্গভুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী)
একই ধরণের আঞ্চলিক উপভাষা আছে বলে মনে হয় না। তাই বিজ্ঞানীরা এখনও ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
শিম্পাঞ্জি গবেষকরা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রতিদিন চারটি বন্য দলকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। সকালে বাসা ছেড়ে যাওয়ার মুহূর্ত থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্ষন্ত তাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করেছেন গবেষকরা ।
তারা দেখতে পেয়েছেন পুরুষরা সঙ্গমের জন্য স্ত্রীদের আকর্ষণ করার জন্য চারটি অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করে। যেমন গোড়ালিতে লাথি মারা, গোড়ালিতে টোকা দেওয়া, পাতা ছিঁড়ে ফেলা এবং ডাল নাড়ানো। এই অঙ্গভঙ্গির ব্যবহার প্রতিবেশী দল এবং আফ্রিকার বিভিন্ন শিম্পাঞ্জি গোষ্ঠীর মধ্যে ভিন্ন ছিল।

৪৫ বছর ধরে শিম্পাঞ্জিদের উপর গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে বিভিন্ন গোষ্ঠী একে অপরের কাছাকাছি থাকার সময়ও বিভিন্ন হাতের অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করে। এর থেকে বোঝা যায় যে শিম্পাঞ্জিরা উপভাষার মতো সামাজিকভাবে এই অঙ্গভঙ্গি শেখে। এটি প্রাণীদের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কৃষ্টিগত পার্থক্যের একটি বিরল উদাহরণ।
২০ বছর আগে একদল গরিলা আঙুল দিয়ে হাত বুলিয়ে সম্ভাষণ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। তারা সবাই আগে এটা করত। কিন্তু তাদের দলের শেষ প্রাপ্তবয়স্ক শিম্পাঞ্জিটি চোরাশিকারিদের হাতে নিহত হওয়ার পর ছোট গরিলারা আর এই আচরণ শিখতে পারেনি।
গবেষকরা বিশ্বাস করেন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ শিম্পাঞ্জীদের মধ্যে নারীদের জন্য প্রতিযোগিতার অভাব এবং আদর্শের অনুপস্থিতির কারণে এটি হয়েছে।

অবৈধ মানবিক কার্যকলাপ শিম্পাঞ্জিদের আচরণ পরিবর্তন করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে শিম্পাঞ্জিদের সংরক্ষণ প্রচেষ্টার অঙ্গ হিসেবে শিম্পাঞ্জি কৃষ্টি রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই উদ্যোগটি কেবলমাত্র এই প্রজাতির বেঁচে থাকার জন্যই নয়, উপরন্তু মানুষের নিজস্ব বিবর্তনীয় ইতিহাস বোঝার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − 1 =