শিম্পাঞ্জিরা তাদের স্বাভাবিক বন্য পরিবেশে যে ফল খায় তাতে কতটা অ্যালকোহল থাকে, এ প্রশ্নের উত্তর এতদিন পরিষ্কার ছিল না। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলের গবেষকেরা প্রথমবারের মতো এই ফলগুলির ইথানল (অ্যালকোহল) মাত্রা মেপে দেখেন। শিম্পাঞ্জিরা প্রতিদিন অনায়াসেই দুটি “মানব পানীয় “-র সমতুল্য অ্যালকোহল পান করে ফেলতে পারে। তবে গবেষকেরা নিশ্চিত নন, শিম্পাঞ্জিরা ইচ্ছে করে বেশি ইথানল–যুক্ত ফল বেছে নিচ্ছে, নাকি তারা যেমনটা পাচ্ছে, তা বাছাই না করেই খাচ্ছে ! তবে তারা যে ফল নিয়মিত খায়, তার অনেকগুলিতেই পরিমাপযোগ্য অ্যালকোহল পাওয়া গেছে। এর মানে, অ্যালকোহল তাদের দৈনন্দিন খাদ্যের অংশ। সুতরাং আমাদের মানব–পূর্বপুরুষের খাদ্যেও এই উপাদান থাকা খুবই স্বাভাবিক। প্রধান গবেষক আলেক্সি মেরো জানান, “সব মিলিয়ে পুরুষ ও মহিলা শিম্পাঞ্জি প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৪ গ্রাম খাঁটি ইথানল খায়”। যা একটি মার্কিন ‘মানব পানীয়’-র সমান।”
শিম্পাঞ্জির ওজন সাধারণত প্রায় ৪০ কিলোগ্রাম। আর মানুষের গড় ওজন প্রায় ৭০ কিলোগ্রাম। সেই হিসাবে, শিম্পাঞ্জিরা তাদের শরীর–ভর অনুপাতে মানুষের তুলনায় প্রায় দুই মাত্রা পানীয়ের সমান অ্যালকোহল গ্রহণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে “একটি মানব পানীয়”–তে থাকে ১৪ গ্রাম ইথানল। ইউরোপের বড় অংশে, সেই মান ১০ গ্রাম। মেরো দুটি দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা ক্ষেত্র, উগান্ডার নগোগো এবং আইভরি কোস্টের জাতীয় উদ্যান থেকে শিম্পাঞ্জিদের খাওয়া ২১ প্রজাতির ফল পরীক্ষা করেছেন। এসব ফলের গড় ইথানল ঘনত্ব ছিল ওজনের ০.২৬%। প্রাইমাটোলজিস্টদের হিসাব অনুযায়ী, একটি শিম্পাঞ্জি প্রতিদিন প্রায় ৪.৫ কেজি (১০ পাউন্ড) ফল খায়, যা তাদের মোট খাদ্যের তিন-চতুর্থাংশ। বার্কলের গবেষকেরা প্রতিটি ফল কতটা খাওয়া হয়, তাও বিবেচনা করেন এবং তাদের দৈনিক অ্যালকোহল গ্রহণের পরিমাণ নির্ধারণ করেন। অধ্যাপক রবার্ট ডাডলি বলেন, “শিম্পাঞ্জিরা প্রতিদিন নিজের ওজনের ৫–১০% পাকা ফল খায়। ফলে অল্প ইথানল থাকলেও মোট অ্যালকোহল গ্রহণ বেশ উল্লেখযোগ্য।“ তিনি বলেন, শিম্পাঞ্জিরা যদি কেবল এলোমেলোভাবে পাকা ফল খায়, তাহলে এটিই হল, অ্যালকোহলের গড় পরিমাণ। আর যদি তারা ইচ্ছে করে বেশি পাকা বা বেশি মিষ্টি ফল বেছে নেয়, তাহলে দৈনিক অ্যালকোহল গ্রহণ আরও বেশি হতে পারে। মেরো জানান, শিম্পাঞ্জিরা সারাদিন ফল খায়, কিন্তু তাদের কখনো নেশাগ্রস্ত দেখায় না। নেশা অনুভব করতে হলে তাদের এত বেশি ফল খেতে হবে যে পেট ব্যথায় ফুলে উঠতে পারে। তবুও নিয়মিত এবং কম–মাত্রার এই প্রতিদিনের অ্যালকোহল গ্রহণ ইঙ্গিত করছে, মানুষ ও শিম্পাঞ্জির শেষ সাধারণ পূর্বপুরুষও প্রতিদিনই ফলের ফারমেন্টেশন থেকে তৈরি অ্যালকোহলের মুখোমুখি হতো। কিন্তু আধুনিক মানবদেহ বা বন্দী শিম্পাঞ্জির খাদ্যতালিকায় এই উপাদান অনেকটাই অনুপস্থিত।
দু’দশক আগেই ডাডলি বলেছিলেন, মানুষের অ্যালকোহলপ্রীতির শিকড় লুকিয়ে আছে প্রাচীন প্রাইমেটদের খাদ্যাভ্যাসে। পরে তিনি ২০১৪ সালে “দ্য ড্রাঙ্কেন মাংকি, হোয়াই উই ড্রিঙ্ক অ্যান্ড অ্যাবিউজ অ্যালকোহল” বইয়ে ধারণাটিকে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেন। প্রথমে এই তত্ত্ব নিয়ে আপত্তি ছিল। অনেক বিজ্ঞানী দাবি করেন, বন্য প্রাইমেটরা নিত্যদিন ফারমেন্টেড ফল বা নির্যাস খায় না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার নতুন প্রমাণ মেলে , আসলে বহু বানর প্রজাতিই পেকে বা গেজে ওঠা ফারমেন্টেড ফল খায় এবং কিছু প্রাইমেট বন্দী অবস্থায় বেশি অ্যালকোহল–যুক্ত খাবার বেছে নেয়।
সূত্র : Ethanol ingestion via frugivory in wild chimpanzees. Science Advances, 2025.
