শিম্পাঞ্জি মায়েরা সন্তানের বিকাশের জন্য খেলা করে

শিম্পাঞ্জি মায়েরা সন্তানের বিকাশের জন্য খেলা করে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৭ মার্চ, ২০২৪

উগান্ডার কিবালে ন্যাশনাল পার্কে দশ বছর যাবত প্রাইমেটদের পর্যবেক্ষণ করে গবেষকরা দেখেছেন শিম্পাঞ্জির বিকাশের জন্য মা-শিশুর খেলা গুরুত্বপূর্ণ। প্রাপ্তবয়স্করা শিম্পাঞ্জিরা প্রায়শই তাদের বাচ্চাদের সাথে খেলে, কিন্তু খাবারের অভাব থাকলে প্রাপ্তবয়স্করা বাচ্চাদের সাথে খেলায় মন না দিয়ে বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য অন্বেষণে মনোনিবেশ করে। কিন্তু মা শিম্পাঞ্জিরা সবসময়ে তাদের সন্তানদের খেলার সাথী, সে সুড়সুড়ি দেওয়া হোক, ধাওয়া করা, বা হাত ছড়িয়ে দৌড়োনো যেকোনো খেলাই হোকনা কেন। মা শিম্পাঞ্জিরা খাদ্যের অভাবের সময় চাপের মধ্যে থাকেও তারা তাদের সন্তানদের শারীরিক ও সামাজিক বিকাশের জন্য একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।
উগান্ডার কিবালে ন্যাশনাল পার্কের গভীর অরণ্যে প্রাইমেটদের ১৩টা প্রজাতি পাওয়া যায়, যার মধ্যে ১০০০টার মতো শিম্পাঞ্জি বাস করে। সেখানে শিম্পাঞ্জিদের নিয়ে নানা অধ্যয়ন করেছেন নৃবিজ্ঞান এবং জীববিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক জারিন মাচান্দা এবং তার প্রাক্তন পোস্টডক্টরাল সহযোগী ক্রিস সাব্বি। গবেষকরা তাদের নানা আচরণ পর্যবেক্ষণ করেছেন যেমন গাছে চড়া, খাওয়া, ডাক, মারামারি করা, খেলা। তারা জানতেন শিম্পাঞ্জিরা খেলতে ভালোবাসে কিন্তু যখন খাবারের অভাব ঘটে তাদের আচরণে কী পরিবর্তন দেখা যায়? তারা দেখেন ফলমূলের অভাবে, শিম্পাঞ্জিরা পাতা, ডুমুর জোগাড়ে লেগে যায় আর তা জড়ো করে রাখে। মা শিম্পাঞ্জিদের খাবারের অভাব থাকলেও তারা কিন্তু সন্তানের পেছনে সময় অতিবাহিত করতে থাকে।
বন্য পশুদের মধ্যে খেলা সাধারণত লক্ষ করা যায়না। ডলফিন, বাঁদর, বনমানুষরা ছাড়া অন্য পশুদের বাচ্চারা নিজেদের মধ্যে খেলে প্রাপ্তবয়স্কদের সাথে বিশেষ খেলেনা। গবেষকদের মতে প্রাইমেটদের মধ্যে খেলার প্রবণতার কারণ হতে পারে যে তাদের বিকাশকালীন সময় অন্য স্তন্যপায়ীদের থেকে বেশি। তাদের মস্তিষ্ক উন্নত, তারা দল বেঁধে বাস করে, দলের কিছু নির্দিষ্ট নিয়মকানুন থাকে, খেলার মধ্যে দিয়ে শারীরিক সক্ষমতার পাশে সামাজিক বন্ধন তৈরি হয়।
শিম্পাঞ্জিরা দল বেঁধে থাকলেও, ছোটো ছোটো দলে বিভক্ত হয়ে যায়, আবার পরে বড়ো দলে মিশে যায়। খাবারের অভাব ঘটলে মা শিম্পাঞ্জিরা ছোটো দলে চলে যায় বা বাচ্চা নিয়ে একা ঘোরে, তাই তাদের বাচ্চাদের খেলার সাথী থাকে না। কিন্তু বেবুনরা সবসময় দল বেঁধে ঘোরে আর দলের বাচ্চারা নিজেদের মধ্যে খেলে।
শিম্পাঞ্জিদের ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে খেলার ধরন আলাদা। ছেলে বাচ্চারা মারামারি করে, আর মেয়ে বাচ্চারা মায়ের মতো আচরণ নকল করে খেলতে থাকে। মানুষের বড়ো হওয়ার ক্ষেত্রেও খেলা খুব গুরুত্বপূর্ণ, আর মানবশিশুর প্রথম খেলার সাথী তার বাবা-মা। এই খেলার মধ্যে দিয়েই তাদের পূর্ণ বিকাশ ঘটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × five =