শিল্পক্ষেত্রে এ আই হুজুগের আসল রূপ

শিল্পক্ষেত্রে এ আই হুজুগের আসল রূপ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৫ জুন, ২০২৫

বিপুল ব্যাপক ঢক্কানিনাদ সত্ত্বেও তথাকথিত ‘এ আই এজেন্টস’ নামক সফটওয়ার পণ্যটি আশানুরূপ বাজার পাচ্ছে না। অথচ এটি মানুষেরই সমতুল্য কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করবে, এমনই ছিল দাবি। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, গত এপ্রিল অব্দি সেটি তার করণীয় কাজের মাত্র ২৪% শেষ করতে পেরেছে। আর সেটুকু করতে গিয়েই মানুষ শ্রমিকদের আস্ত আস্ত বিভাগকে গিলে খেয়েছে এই সফটওয়ার। এ আই হুজুগের আসল বাস্তবতাটা এবার ক্রমেই চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে বিভিন্ন সংস্থার এগজিকিউটভদের । যেমন ব্যবসাবাণিজ্য বিশ্লেষণ ও পরামর্শদাতা সংস্থা গার্টনার-এর ১৬৩ জন বিজনেস এগজিকিউটিভের অর্ধেক জনই বলেছেন, তাঁদের খরিদ্দার সেবায় নিযুক্ত কর্মী সংখ্যা বেশ কিছুটা কমিয়ে ফেলার যে-পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল তা ২০২৭ নাগাদ পরিত্যাগ করতে হবে। যেসব কর্পোরেট জনসংযোগওয়ালারা এতদিন “স্বয়ংক্রিয় যুগোত্তর” কৃবু সম্বন্ধে বড়ো বড়ো ভাষণ লিখছিলেন তাঁরা এখন ভাষা বদলে “সংকর দৃষ্টিভঙ্গি” কিংবা “উত্তরণকালীন বাধাবিপত্তি”র বুলি আওড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁরা এই সোজা কথাটা বলতে চাইছেন যে কাজ চালাতে গেলে এখনও মানুষ কর্মী চাই। গার্টনার সংস্থার এক প্রবর আধিকারিক ক্যাথি রস বলেছেন, “নানা ধরণের পারস্পরিক ক্রিয়ায় মানবিক স্পর্শ এখনো অপরিহার্য। তাই সংস্থাগুলিকে প্রযুক্তি আর মানবিক সমমর্মিতা ও বোধের মধ্যে ভারসাম্য রেখে চলতে হবে”। এ তো নতুন কিছু নয়, কর্মচারীরা তো একথা বেশ কিছুদিন ধরেই অনুভব করছেন। ‘গোটু’ নামক আরেক কৃবু সংস্থা এবং ওয়ার্কপ্লেস ইন্টেলিজেন্স নামক গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ৬২% কর্মচারী মনে করেন, কৃবু নিয়ে প্রচারে বেশ একটু বাড়াবাড়ি হয়েছে। একই ভাবে মাত্র ৪৫% কর্পোরেট কৃবু ম্যানেজার জানিয়েছেন যে তাঁদের মতে সুসংগঠিত কৃবু কর্মনীতি ঠিকঠাক কাজ করছে। এ থেকে বোঝা যায়, এই প্রযুক্তিকে বেশ একটু ছড়িয়েছিটিয়ে তাড়াহুড়ো করে কাজে লাগানো হয়েছে। এইসব কৃবু সংস্থার মাথাদের মধ্যে ৫৬% বলেছেন, কৃবু-কে রপ্ত করে নেওয়ার পিছনে প্রধান প্রধান বাধা হল “নিরাপত্তার প্রশ্ন” আর “সুসমন্বয় সাধনের বাধাবিপত্তি”। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে বেশ কয়েকটি সংস্থা লজ্জায় অধোবদন হয়েছে। আর তারই পটভূমিতে এসেছে এইসব প্রতিবেদন। যেমন নতুন-স্থাপিত ঋণদান সংস্থা ক্লার্না বহু-প্রতিশ্রুত কৃবু-বিপ্লবের প্রণোদনায় গোটা ২০২৪ সাল জুড়ে ২২% কর্মচারী ছাঁটাই করেছিল। কিন্তু গত মে মাসে তাদের কৃবু রণকৌশল আচমকাই উলটো রাস্তা ধরে ঘোষণা করেছে যে তারা এবার “লোক নিয়োগ করার জন্য উঠেপড়ে লাগবে”। অর্থাৎ হারানো পেশিশক্তি পুনরুদ্ধার করবে।
প্রযুক্তি বিশ্লেষক এড জিট্রন-এর মতে ‘কৃবু এজেন্ট’ নিয়ে এই গোটা প্রহসনটার মূলে আছে একটাই ঘটনা। “কৃবু শক্তিতে উৎপন্ন এইসব পণ্য ঠিক কী কাজ করবে তা স্পষ্ট নয়। যখন শেষ পর্যন্ত এদের গড়েপিটে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হয়, দেখা যায় তারা তেমন একটা কাজ করছে না। এইসব ‘এজেন্ট’গুলোকে এমনভাবে বিজ্ঞাপিত করা হয় যেন তারা বুদ্ধিযুক্ত জ্যান্তরূপ। আসলে কিন্তু এরা ছদ্মবেশধারী স্বয়ংক্রিয়তা ছাড়া আর কিছু না, যাদের প্রোগ্রাম করার পিছনে উদ্যোগ-ক্রেতাদের সময় বিনিয়োগ করতে হয়”।
সূত্র: https://futurism.com/companies-replaced-workers-ai?fbclid=IwY2xjawLCEgJleHRuA2FlbQIxMQABHrnllTHgZW2KJErKiC88Op9SVQF_0FqZMVyO0_nNh1QQFnSxa0d7u1BLwDuD_aem_-5zHvY5MNJqHZ91MFuURMg&sfnsn=wiwspwa

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − one =