শিশু যখন তার কচি গলায় রিনরিনে সুরে আধো আধো ছোট্ট ছোট্ট বুলি শুরু করে, বাবা -মায়ের খুশির সীমা থাকে না। বাচ্চার প্রতিটা শব্দ, তার অভিব্যক্তি বাবা মায়ের সম্পদ। বাবা মায়েরা শুনলে বিস্মিত হবেন, কথা বলার সাথে সাথে শিশুর হৃদয় ছন্দবদ্ধভাবে কাজ শুরু করে। জেরেমি আই. বোরজন, হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক, প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস-এ জানিয়েছেন, শিশুর প্রথম আধো বুলি ও শব্দ গঠনের প্রাথমিক প্রচেষ্টা শিশুর হৃদস্পন্দনের সাথে সরাসরি যুক্ত। এই গবেষণার ফলাফল ভাষা বিকাশ, কথা বলা ও যোগাযোগের ব্যাধির সম্ভাব্য প্রাথমিক সূচক বোঝার ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে।
শিশুর কথা বলা শুধু জ্ঞানীয় প্রক্রিয়াই নয়। এটা এমন এক মোটর দক্ষতা যেখানে শিশুকে শরীর জুড়ে বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের একাধিক পেশির সমন্বয় শিখতে হয়। এই সমন্বয় সরাসরি হৃদস্পন্দনের হারের সাথে যুক্ত। বোরজন গবেষণা করেছেন যে হৃদস্পন্দনের এই ওঠানামা ২৪ মাসের শিশুর কণ্ঠস্বর গঠন ও শব্দ উত্পাদনের সাথে মিলে যায় কিনা। তিনি দেখতে পান যে হৃদস্পন্দনের হারের ওঠানামা কণ্ঠস্বরের সময়, তার সময়কাল ও কথা বলার সঙ্গে সম্পর্কিত। সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীর হৃদস্পন্দন ওঠানামা করে, ছন্দোবদ্ধভাবে প্রথমে হৃদস্পন্দন বাড়ে, তারপর কমে। বোরজন দেখেছেন, শিশুদের হৃদস্পন্দনের ওঠানামা সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছোলে তারা আওয়াজ নির্গত করতে পারে। সর্বোচ্চ চূড়ায় উত্পাদিত কণ্ঠস্বর বেশ দীর্ঘ হয়৷ যখন হৃদস্পন্দন হ্রাস পায় সর্বনিম্ন পর্যায়ের ঠিক আগে উত্পাদিত কণ্ঠস্বরকে, একটা শব্দ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যায়।
বোরজন ও তার দল ১৮ থেকে ২৭ মাস বয়সের ৩৪টা শিশুর দ্বারা নির্গত মোট ২৭০৮ টা কণ্ঠস্বর পরিমাপ করেছেন। এই শিশুরা তখন তাদের দেখাশোনার লোকের সাথে খেলছিল। এই বয়সের শিশুরা সাধারণত পুরো শব্দ বলে না, তাদের বলা কথার একটা ছোটো অংশ (১০.৩%) শব্দ হিসেবে শনাক্ত করা যেতে পারে। অধ্যয়নে, গবেষকরা শিশুর মুখের সমস্ত শব্দের ( হাসি, বিড়বিড়, বুলি) সঙ্গে হৃদস্পন্দনের হারের গতিশীলতা বিবেচনা করেন। একটা শিশুর বলা প্রতিটা শব্দ তাদের মস্তিষ্ক এবং শরীরকে একে অপরের সাথে সমন্বয় করতে শিখতে সাহায্য করে, যা তাদের কথা বলার দিকে নিয়ে যায়। শিশুর বেড়ে ওঠার সঙ্গে তাদের স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র অর্থাৎ শরীরের যে অংশ হৃদস্পন্দন এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করে, তা বৃদ্ধি পায় এবং বিকাশ লাভ করে। জীবনের প্রথম কয়েক বছর হৃৎপিণ্ড এবং ফুসফুস কীভাবে কাজ করে তার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন থেকে চিহ্নিত করা যায়, আর এই পরিবর্তনগুলো একজন ব্যক্তির সারাজীবনব্যাপী চলতে থাকে।