শীতল অঞ্চলে কীটপতঙ্গের বাড়বাড়ন্ত

শীতল অঞ্চলে কীটপতঙ্গের বাড়বাড়ন্ত

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৫ এপ্রিল, ২০২৫

জলবায়ুর বিপুল পরিবর্তনের ফলে পোকামাকড় এবং পরজীবীরা নিজেদের বাঁচাতে শীতলতর অঞ্চলের দিকে ধাবিত হচ্ছে । যে সমস্ত অঞ্চলে পোকামাকড় থাকবে বলে ভাবাও যেত না, সেসব জায়গাতেও এখন পোকামাকড়ের উৎপাত বাড়ছে। এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড্যান বেবার, হেবেই বিশ্ববিদ্যালয় এবং চাইনিজ একাডেমি অফ সাইন্সের গবেষকদের নিয়ে গঠিত একটি গবেষক দল এর উপরে কাজ করছেন। তাঁরা বলছেন, গম এবং ভুট্টা সহ প্রধান প্রধান ফসলগুলি রক্ষার্থে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। শীতল জলবায়ুর জায়গাগুলিতেও তাপমাত্রা বাড়ছে সেটা মনে রাখা দরকার। বেশি পোকামাকড় এবং পরজীবী শীতকালে বেঁচেবর্তে থাকার যোগ্য হয়ে উঠছে, দ্রুত বংশবৃদ্ধি করছে, ফলে খাবারের চাহিদা বাড়ছে আর মানুষের খাদ্যের ভাঁড়ারে টান পড়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। সেচ এবং সারযুক্ত ফসল-ফলন ব্যবস্থা বেশি ফসল যেমন দেয়, তেমনি কীটপতঙ্গদের নির্ভরযোগ্য খাদ্য এবং আশ্রয়ও দেয়। এতে প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রণ এবং ভারসাম্য স্বভাবতই দুর্বল হয়। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় প্রজাতিগুলি নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। কনকনে ঠান্ডা বাতাস একসময় বড় বড় পোকার ঝাঁকের আক্রমণ ঠেকাত। কিন্তু উষ্ণ জলবায়ু দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়ায় তা এখন পোকামাকড়কে আরো সক্রিয় করে তুলছে। সবথেকে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছে উচ্চ অক্ষাংশ। এই অঞ্চলের গম, ধান এবং সয়াবিনক্ষেত্রগুলি নতুন এবং পুরাতন হানাদারদের ‘প্রধান খাদ্যক্ষেত্রে রূপান্তরিত হচ্ছে। ২০১৯ সালে পোকামাকড়ের আক্রমণে ক্ষতির পরিমাণ ৪২৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। সঠিক নজরদারি না থাকলে জাহাজে, বীজের প্যাকেটে পোকামাকড়দের বাড়বাড়ন্ত আরো ক্ষতি হানবে। “সারা বিশ্বে ফসল উৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশ বর্তমানে পোকামাকড় এবং বিভিন্ন রোগের কারণে নষ্ট হচ্ছে যা বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি”, বলছেন অধ্যাপক বেবার। একে তো কৃষকেরা অপ্রত্যাশিতw আবহাওয়ার সাথে লড়াই করছেন, তার উপর, বাড়তি ঝক্কি এই পোকামাকড়ের উৎপাত। শুধুমাত্র বাণিজ্যিক বা অর্থনৈতিক প্রভাব নয়, ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলিতে খাদ্য সংকট আরো বাড়িয়ে তুলবে এই সমস্যা। সমগ্র জনসমাজ ফসলের ঘাটতির সম্মুখীন হবে, আর উৎপাদন কমলে দাম তো বাড়বেই। প্রবল বৃষ্টিপাত ছোট ছোট পোকামাকড়দের ধুয়ে ফেলতে পারলেও, ভেজা জমি যাদের পছন্দ তাদের কাছে আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রার এই সামগ্রিক পরিবর্তন তো উপহার স্বরূপ। বেবার বলেছেন, “গম, ধান ,ভুট্টা এবং সয়াবিনের মতন প্রধান প্রধান ফসলগুলিকে ক্রমবর্ধমান পোকামাকড়ের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে হলে আমাদের আরো ভালো করে পোকামাকড় পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তার সাথে প্রয়োজন পূর্বাভাস দিতে সমর্থ বৈজ্ঞানিক মডেল এবং জলবায়ুর কেজো ব্যবস্থাপনা-কৌশল”। ক্ষেতের কাছাকাছি অ-ফসলী প্রজাতির উদ্ভিদ রোপণের পরামর্শ দিচ্ছেন অনেক বিশেষজ্ঞ, যার ফলে কীটেদের স্বাভাবিক শত্রুসংখ্যা বাড়বে। যেমন, উকুন জাতীয় জাব পোকা-খেকো রঙদার গুবরে পোকা (লেডি বাগ)। এই ধরনের জৈব সংরক্ষণ, কৃষকদের কীটনাশক ব্যবহার কমাতেও সাহায্য করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen − three =