তিব্বত, নেপাল, ভূটান, ভারতে এমন এক পরজীবী ছত্রাকের দেখা মেলে, যা শুঁয়োপোকাকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে মেরে ফেলে। এই ছত্রাকে থাকে একটি যৌগ যা শুঁয়োপোকার জড়ত্বর জন্য দায়ী। কর্ডিসেপিন নামে এই যৌগটি কর্ডিসেপস এবং ওফিওকর্ডাইসেপস প্রজাতির ছত্রাকে পাওয়া যায়। গবেষকরা দেখেছেন এই যৌগ কিছু ক্যানসারের বৃদ্ধির পথ আটকে দিতে পারে। পূর্ববর্তী গবেষণার ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাজ্যের নটিংহাম ইউনিভার্সিটির গবেষকরা ছত্রাকের এই কর্ডিসেপিন নামক যৌগটির ক্যানসার প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা গড়ে তুলেছেন। আর এন এ-বিশেষজ্ঞ জীববিজ্ঞানী কর্নেলিয়া ডি মুর বলেন, “ এখন বিরাট আকারে এই সব পরীক্ষনিরীক্ষা চালানো অনেক সহজ হয়ে গেছে। ফলে আমরা একই সঙ্গে হাজার হাজার জিন নিয়ে কাজ করতে পেরেছি”।
পরীক্ষাগারে মানুষের দেহকলার ওপর পরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা যৌগটির জেনেটিক বিশ্লেষণ করে সেটি কীভাবে এই কোশগুলোর ওপর কাজ করে তা নির্ণয় করেন। তাঁরা দেখেন যে এই রাসায়নিকটি কর্ডিসেপিন ট্রাইফসফেট নামে এক সক্রিয় যৌগে রূপান্তরিত হয়, যা কোশের কার্যকলাপে বাধা দেয়। তাঁরা আবিষ্কার করেছেন যে কর্ডিসেপিন ট্রাইফসফেট কোশের কাজকর্মের দুটো পৃথক পথকে অবরোধ করে, যে-পথগুলো ধরেই ক্যানসার কোশ মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ে। এই যৌগকে ক্যানসার চিকিত্সায় ব্যবহারের জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন, যা থেকে এই রোগের চিকিৎসায় নতুন ধরনের ওষুধ পাওয়া যেতে পারে। কর্ডিসেপিন ট্রাইফসফেট যেরকম নির্ভুলভাবে কাজ করে তা বর্তমান চিকিত্সার নানা বাধাবিঘ্নকে অতিক্রম করতে পারবে। এটি শুধু ক্যান্সার কোশগুলিকেই আক্রমণ করবে, সুস্থ দেহকলার খুব বেশি ক্ষতি করবে না।
কর্ডিসেপস গোষ্ঠীর সি. মিলিটারিস প্রজাতি দীর্ঘকাল ধরে চীনা ওষুধে বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নানান প্রদাহ ও স্ফীতি-বিরোধী (অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি) এবং জীবাণুনাশক (অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল) বৈশিষ্ট্য থাকায় এগুলিকে অনেক আধুনিক ওষুধেও ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতিজগত থেকে পাওয়া যৌগসমূহ মানুষের মোটা হয়ে-যাওয়া থেকে শুরু করে রক্ত জমাট-বাঁধা পর্যন্ত কত রোগের চিকিৎসাকেই না অনুপ্রাণিত করছে।
(সূত্রঃ FEBS Letters)