বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে শুক্র গ্রহ একসময় অনেকটা পৃথিবীর মতো ছিল। কিন্তু কীভাবে গ্রহ বিবর্তিত হয়ে বর্তমানে এসে পৌঁছোছে তা জানা পৃথিবীর ভবিষ্যত, সৌরজগতের বাইরে জীবনের সন্ধানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গবেষকরা শুক্রের হারিয়ে যাওয়া জলের রহস্য উদঘাটন করছেন বলে জানিয়েছেন। কলোরাডো বোল্ডার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহ বিজ্ঞানী মাইকেল শ্যাফিন জানিয়েছেন, শুক্র গ্রহের আকার ও ভর পৃথিবীর কাছাকাছি, কিন্তু এখানে পৃথিবীর তুলনায় ১০০০০০ গুণ কম জল রয়েছে। আকার এবং ভরের সাদৃশ্যের পাশাপাশি, উভয় গ্রহই কমবেশি একই শিলা, লোহার কোর এবং পাথুরে ম্যান্টেল দ্বারা গঠিত বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। কিন্তু পৃথিবী যেমন সবুজ, জলে পরিপূর্ণ, প্রাণে ভরপুর, সেখানে শুক্র গ্রহ কেন একদম অন্যরকম। এই গ্রহ বিষাক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড মেঘের দ্বারা পূর্ণ, আগ্নেয়গিরিতে পূর্ণ শুক্রের পৃষ্ঠে সালফিউরিক অ্যাসিড বৃষ্টি হয়। গ্রিনহাউসের প্রভাবে এই গ্রহের এখন গড় তাপমাত্রা ৪৬৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গবেষণায় জানানো হয়েছে এর পেছনে যে কারণ থাকতে পারে তা হল ডিসোসিয়েটিভ রিকম্বিনেশন নামক এক প্রক্রিয়া। যার ফলে শুক্রের হাইড্রোজেন বেরিয়ে গিয়ে মহাকাশে চলে যায়, ফলে এই গ্রহ খুব দ্রুত জল হারায়। ডিসোসিয়েটিভ রিকম্বিনেশন রাসায়নিক প্রক্রিয়া আন্তঃনাক্ষত্রিক এবং বায়ুমণ্ডলীয় রসায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীতে এই প্রক্রিয়া দেখা যায় না, কারণ এখানে মুক্ত ইলেকট্রন পাওয়া যায় না। যেখানে আয়নিত অণু প্রচুর পরিমাণে থাকে যেমন প্লাজমা সেখানে এই রাসায়নিক প্রক্রিয়া ঘটে।
গবেষকদের কাজের ফলাফল এই প্রক্রিয়ার কথা বলেছে, যেখানে HCO+ নামক একটি অণুর পুনর্মিলন হয়েছে। এটা হাইড্রোজেন, কার্বন এবং অক্সিজেন নিয়ে গঠিত একটা ধনাত্মক আয়ন, যা কার্বন ডাই অক্সাইড এবং জলের সংমিশ্রণে গঠিত, এখানে ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রন বেরিয়ে যায়। এই দলের গবেষণা দেখায় যে যখন ইলেকট্রনগুলো অণুর সাথে পুনরায় মিলিত হয়, তখন হাইড্রোজেন আলগা হয়ে মহাকাশে চলে যায়। আর হাইড্রোজেনের অভাবে জল গঠিত হতে পারেনা। এখনও শুক্রের বায়ুমণ্ডলে এই HCO+ অণু খুঁজে পাওয়া যায়নি, তবে পরিকল্পিতভাবে এই গ্রহে যাওয়ার মিশন নিলে বহু দশক ধরে শুক্রের আবহাওয়া, বিবর্তন, বাসযোগ্যতা নিয়ে নানা কিছু জানা যেতে পারে। এই গবেষণা নেচারে প্রকাশিত হয়েছে।