শুধু সংখ্যা গুণে নয়

শুধু সংখ্যা গুণে নয়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৩ মার্চ, ২০২৫

একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে হলে শুধুমাত্র পড়াশোনার মান উন্নত করলেই হবে না।বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো—তাঁদের কাজের স্বীকৃতি, শিক্ষার্থীদের ও সমাজের ওপর তাঁদের কাজের প্রভাব বিস্তার এবং সহকর্মীদের সঙ্গে কাজের বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ। অন্যদিকে, শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র ভালো শিক্ষা চায় না। এর সাথে সাথে তারা অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি করতে , মানসিক উন্নতি ও ভবিষ্যতে ভালো চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে চায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সফলতা সাধারণত গবেষণাপত্র প্রকাশনার সংখ্যা দিয়েই মাপা হয়। ফলে এ সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সঠিক মূল্যায়ন হয় না।গবেষকদের জন্য উচ্চমানের পত্রিকায় গবেষণা প্রকাশ করা এবং বেশিসংখ্যক উল্লেখ পাওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেটা তাঁদের পেশাগত জীবনকে এগিয়ে নিতে যেতে সাহায্য করে।তবে এর ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও অন্যান্য কার্যক্রমে সময় কম দেওয়া হয়। যদিও উল্লেখের সংখ্যা গবেষকের দক্ষতার সূ চ ক, কিন্তু এটি এমন এক ব্যবস্থা তৈরি করে যেখানে যারা আগে থেকেই বেশি উল্লেখ পান, তাঁরাই ক্রমে আরও বেশি প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন।এখন অনলাইনে বিভিন্ন উপায়ে গবেষণার গুরুত্ব মাপা যায়, যেমন—নীতি নির্ধারকদের উল্লেখ বা গণমাধ্যমে আলোচনার পরিমাণ দেখা। তবুও, এখনো h-index (যা গবেষণার উল্লেখ সংখ্যা গুণে নির্ধারণ করা হয়) গবেষণার প্রভাব মাপার সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি।গবেষক কেলি-অ্যান অ্যালেনের
মতে, গবেষকদের অবমূল্যায়িত অথচ ভালো কাজগুলো নিয়মিতভাবে গণনা করলে শিক্ষাগত জীবনকে আরও আনন্দদায়ক করা সম্ভব। অনেক সময় গবেষকরা যেসব ইতিবাচক কাজ করেন, তা তেমন স্বীকৃতি পায় না, অথচ সেগুলো খুবই মূল্যবান।তিনি এই পদ্ধতিটিকে ‘G+ ইনডেক্স’ বলেছেন , এখানে ‘G’ মানে হলো উদারতা, সহায়তা এবং শিক্ষাঙ্গনের অন্যান্য ভালো কাজ। এই সূচি ( ইনডেক্স) গবেষকদের সহযোগিতা ও ইতিবাচক অবদানের স্বীকৃতি দেবে।এই নির্দেশক স্বাধীনভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে অথবা প্রচলিত গবেষণা মূল্যায়ন পদ্ধতির (যেমন h-index) পাশাপাশি অতিরিক্ত মানদণ্ড হিসেবে কাজ করতে পারে। এর মাধ্যমে প্রবীণ গবেষকরা কতবার তরুণ গবেষকদের সঙ্গে গবেষণা করেছেন এবং তাঁদের লেখক হিসেবে সুযোগ দিয়েছেন তার মূল্যায়ন করা যেতে পারে । এতে বোঝা যাবে যে তাঁরা নতুনদের সাহায্য করছেন এবং তাঁদের ভবিষ্যৎ গড়তে সাহায্য করছেন।যেহেতু গবেষণা দলের অন্তর্গত সদস্য সংখ্যা ভিন্ন হতে পারে, তাই গবেষণাপত্রে শিক্ষানবীশদের স্বীকৃতি দেওয়া হলে সেটিও গণনা করা যেতে পারে।তরুণ গবেষকদের শেখার সুযোগ দেওয়ার এই নিয়ম পেশাগত জীবনের শুরুর দিকে বাধ্যতামূলক থাকে না ।এই সহযোগিতার মান বিভিন্নভাবে নির্ধারণ করা যায় যেমন—গবেষকরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, দেশ বা অন্য গবেষকদের সঙ্গে কতটা একসঙ্গে কাজ করেছেন। নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে, সমাজের বিভিন্ন সংগঠন, শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং গবেষণার সঙ্গে সরাসরি অভিজ্ঞতা থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে যৌথ গবেষণাও এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। তবে, যাঁদের গবেষণার সুযোগ বা যোগাযোগের ক্ষেত্র কম, তারা যেন কোনোভাবে পিছিয়ে না পড়ে সেটাও নিশ্চিত করা জরুরি। এই সূচক ভালো গবেষণার মান নির্দেশ করতে পারে, যেমন আগের করা গবেষণাগুলো আবার পরীক্ষা করা হলে সেটির স্বীকৃতি দেওয়া। গবেষণার প্রভাব সাধারণ মানুষের কাছে বোঝানোর জন্য ওপেন-সায়েন্স পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা, গবেষণার পরিকল্পনা আগেই প্রকাশ করা এবং পডকাস্ট, ব্লগ বা গণমাধ্যমের সূত্রে গবেষণার তথ্য ভাগ করে নেওয়া হয় ।কিছু ক্ষেত্রে পেশাদারদের কাজে লাগবে এমন পত্রিকায় গবেষণা প্রকাশ করা যেতে পারে, যাতে গবেষণার ফলাফল শুধু শিক্ষার জগতে সীমাবদ্ধ না থাকে। একইভাবে, এসব পত্রিকার জন্য সম্পাদনা ও পর্যালোচনা করা বা বৈজ্ঞানিক সংগঠনে কাজ করাও গুরুত্বপূর্ণ – তা যতই ছোট বা কম জনপ্রিয় হোক না কেন। শেষ পর্যন্ত, কোন বিষয়গুলো মূল্যায়নের জন্য ব্যবহার করা হবে, তা শিক্ষানবিশ সম্প্রদায়ই ঠিক করবে ।গবেষণায় অর্থ সাহায্যকারী সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই সূচককে তাদের মূল্যায়নের অঙ্গ করতে পারে, যাতে গবেষকদের ভালো কাজের স্বীকৃতি দেওয়া যায় এবং উৎসাহ বাড়ানো যায়।অনেক তথ্য ইতোমধ্যে সংরক্ষিত আছে, তবে সেগুলো আরও ভালোভাবে সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা করার জন্য উন্নত পরিচালন ব্যবস্থা প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − 3 =