
আমরা জানি মানুষ সাধারণত কান নাড়াতে পারে না। কিন্তু মানুষের কানে অরিকুলার পেশী নামে ছোট ছোট যেসব পেশী আছে সেগুলি আমাদের পূর্বপুরুষদের বিভিন্ন দিক থেকে আসা শব্দ মনোযোগ দিয়ে শুনতে সাহায্য করত। যেটা তাদের শিকার খোঁজার কাজে লাগত। কিন্তু ক্রমে তারা এগুলির ব্যবহার বন্ধ করে দেয়। তাই এখন এগুলি অকেজো। বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে মূলত তিনটি বড়ো পেশী কানের পেশীকে মাথার খুলি এবং মাথার ত্বকের সাথে যুক্ত করে । এগুলিই আমাদের কান নাড়াতে সাহায্য করে, বিশেষ করে উচ্চতর কানের পেশী। আমরা যখন শোরগোলের মধ্যে কিছু শোনার চেষ্টা করি তখন এরা আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর থেকে বোঝা যায় যে এই পেশীগুলি কেবল কান নাড়ার জন্য নয়, শোনার অসুবিধার সময়ও এগুলি আমাদের কাজে লাগে। বিজ্ঞানীরা দেখতে চেয়েছিলেন যে মনোযোগ দিয়ে শোনবার সময় আমাদের কান সামান্য নড়াচড়া করে কিনা। পেশীর কার্যকলাপ পরীক্ষা করার জন্য ২০ জন মানুষের কানে ক্ষুদ্র সেন্সর বসিয়ে তাদের অডিও বুক ও পডকাস্ট শোনানো হয়। ১২ মিনিটের এই পরীক্ষার তিনটি অসুবিধা দেখা যায়।
পডকাস্টটি অডিও বুকের চেয়ে শান্ত ছিল। যদিও স্পিকারের আওয়াজটা ছিল অডিওবুকের থেকে আলাদা। বিজ্ঞানীরা এটিকে আরও কঠিন করার জন্য আরো একটি পডকাস্ট যুক্ত করেন । দেখা গেল কানের দুটি পেশী বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখায় । পিছনের পেশী শব্দের দিক পরিবর্তনের প্রতি সাড়া দেয়। অন্যদিকে কানের উপরের পেশী শোনা কতটা কঠিন তার প্রতি সাড়া দেয়। অংশগ্রহণকারীরা বলেন, শোনা যত কঠিন হয়ে উঠছিল ততই তারা মনোযোগ হারিয়ে ফেলছিলেন । শোনা কঠিন হওয়ার সাথে সাথে অডিও বুক সম্পর্কে তাদের প্রশ্নের উত্তরও কম সঠিক হতে থাকে।
গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন, যখন মানুষ জোরালো শব্দ শোনে তখন কানের ক্ষুদ্র পেশীগুলি খুব সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর থেকে বোঝা যায় যে এই পেশীগুলি একজন ব্যক্তি শোনার জন্য কতটা চেষ্টা করছে তার একটি ভাল সূচক হতে পারে। তবে, গবেষকদের বিশ্বাস, এই পেশীগুলির নড়াচড়া আসলে মানুষকে আরও ভালোভাবে শুনতে সাহায্য করার পক্ষে খুব ছোট। এই গবেষণার কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। প্রথমত,স্বাভাবিক শ্রবণশক্তি সম্পন্ন তরুণদের একটি ছোটো দলের ওপর কাজটি করা হয়েছিল । কিন্তু বিষয়টি ভালোভাবে বোঝার জন্য, আরও বড় এবং বৈচিত্র্যময় গোষ্ঠীর লোকদের নিয়ে পরীক্ষা করতে হবে। শোনার সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে । মূলত প্রাথমিক ফলাফলগুলি আকর্ষক হলেও, শোনার জন্য পেশীর নড়াচড়ার ভূমিকা এবং শ্রবণস্বাস্থ্য উন্নত করতে এই জ্ঞান কীভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে তা সম্পূর্ণরূপে বোঝার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।