১৯৫০ সালে বিখ্যাত গণিতবিদ শ্রীনিবাস রামানুজনের উত্তরাধিকারকে সম্মান জানাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল রামানুজন ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডি ইন ম্যাথমেটিক্স (RIASM) । ১৯৬৭ সালে ইউজিসি এই প্রতিষ্ঠানকে উচ্চস্তরের গাণিতিক গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে উন্নীত হয়েছিল । কিন্তু আজ সেই সংস্থা পরিচয় হারানোর দ্বারপ্রান্তে। সে প্রসঙ্গে আসার আগে শ্রীনিবাস রামানুজনকে নিয়ে একটু জেনে নেওয়া যাক।
শ্রীনিবাস রামানুজন (১৮৮৭-১৯২০) সংখ্যাতত্ত্বে অসংখ্য অবদান রেখেছিলেন । যার মধ্যে বিভাজন ফাংশনের বৈশিষ্ট্যগুলির মতো অগ্রণী আবিষ্কারও ছিল । তাঁর গবেষণাপত্রগুলি ইংরেজি এবং ইউরোপীয় জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯১৮ সালে তিনি লন্ডনের রয়েল সোসাইটির সভ্য নির্বাচিত হন। গণিতে তাঁর প্রধান অবদান ছিল ‘রিয়েল অ্যানালিসিস’, অসীম সিরিজ, সংখ্যা তত্ত্ব এবং গেম থিওরির ক্ষেত্রে । গণিতের ক্ষেত্রে তাঁর অতুলনীয় কৃতিত্বের কারণে ২২ ডিসেম্বর (তাঁর জন্মদিনটি) গণিত দিবস হিসেবে পালিত হয়।
এবার আসি রামানুজন ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডি ইন ম্যাথমেটিক্স প্রসঙ্গে। একটি সরকারী নথি অনুসারে, একসময়ে এটি ছিল এক মর্যাদাপূর্ণ গবেষণাকেন্দ্র। আর এ র্যাাঙ্কিন, আই জি ম্যাকডোনাল্ড, জে এম অ্যান্ডারসন, আরএলই শোয়ার্জেনবার্গার, কেডি এলওয়ার্দি, ডি রিস, জর্জ লুসটিগের মতো প্রখ্যাত গণিতবিদ এখানে কাজ করেছেন। কিন্তু অচিরে এটি হয়তো ইতিহাস হয়ে উঠবে। ১৯৭২ সালে ইউজিসির ১৪.৪ লক্ষ টাকা অনুদানে নির্মিত ৩.৩৮ একর বিস্তৃত এর ক্যাম্পাসটি এখন জরাজীর্ণ। ইনস্টিটিউটের ভগ্নপ্রায় অবকাঠামোকে বিশ্ববিদ্যালয় ‘অনিরাপদ’ ঘোষণা করেছে এবং কেন্দ্রটিকে অবিলম্বে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউওএম) স্টেশনারি ভবনে স্থানান্তর করতে বলা হয়েছে। যে শ্রেণীকক্ষগুলিতে একসময় বীজগণিত, হারমনিক বিশ্লেষণ এবং স্টোকাস্টিক প্রক্রিয়ার উপর সেমিনারগুলি উপভোগ্য হয়ে উঠত, বছরের পর বছর অবহেলা এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেখানে এখন বিশাল বিশাল ফাটল, এগুলি মেরামতের প্রয়োজন। বছরের পর বছর বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিক সংকটের সাথে লড়াই করছে এবং ইনস্টিটিউটের অবস্থার প্রতি তা একেবারে অন্ধ। শিক্ষাবিদদের আরও বিরক্তির কারণ হল, সম্প্রতি রাজ্য সরকার এই ক্যাম্পাসের করুণ অবস্থা উপেক্ষা করে সেখানে সমাজকল্যাণ বিভাগের জন্য একটি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল নির্মাণের ঘোষণা করেছে। হোস্টেলের নির্মাণ কাজ শীঘ্রই শুরু হবে, ফলে ইন্সটিটিউট ভবন আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইন্সটিটিউট-এর প্রধানকে ক্যাম্পাস থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে স্টেশনারি ভবনে ইন্সটিটিউট-এর জন্য বরাদ্দকৃত জায়গাটি ইতিমধ্যেই অন্য কোনও বিভাগ দখল করে নিয়েছে। তাই আপাতত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত মালব্য মিশন শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের দুটি কক্ষে রামানুজন ইন্সটিটিউট-এর ক্লাস চলছে। একজন শিক্ষার্থী বলেন, “পরিস্থিতি খুবই অনিশ্চিত। শিক্ষকদের বসার জায়গা নেই, তাঁদের শ্রেণীকক্ষের বাইরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ।” রামানুজন ইন্সটিটিউট-এ বর্তমানে সাতজন অনুষদ সদস্য এবং ১২২ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন, যার মধ্যে ১০ জন পিএইচ ডি স্কলারও রয়েছেন।
ইন্সটিটিউট-এর প্রাক্তন পরিচালক ভি থাঙ্গারাজ ২০২২ সালে এর জরাজীর্ণ অবস্থা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দিষ্ট বিভাগের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তার ভিত্তিতে উচ্চশিক্ষা বিভাগ ২০২৩ সালের অক্টোবরে এটি পরিদর্শন করে পূর্ত বিভাগের প্রধানকে নির্দেশ দেন, মূল স্থাপত্য ভেঙে নতুন কাঠামো তৈরির জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করতে । কিন্তু দুঃখের বিষয় এখনও পর্যন্ত কিছুই হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রিতা জন জানিয়েছেন, “প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সহায়তায় ইনস্টিটিউটটি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা চালানো হবে।”
তথ্যসূত্র : The New Indian Express