পূর্ব আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে টেকটোনিক পরিবর্তনের কারণে ধীরে ধীরে ভাঙন দেখা দিচ্ছে। তৈরি হতে চলেছে নতুন মহাসাগর। আর ঘটনাটি ঘটতে চলেছে আগামী ৫ কোটি বছরের মধ্যেই। এমন কথা জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ঠিক যেমন ২৩ কোটি বছর আগে পৃথিবীর প্রাচীন ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের ফলে প্যাঞ্জিয়া ভেঙে গিয়েছিল। জীবাশ্ম প্রমাণ বলছে আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকা এই দুটি জায়গাতেই প্রাগৈতিহাসিক সাইনোগনাথাস দেখা গিয়েছিল। সাইনোগনাথাস একধরনের স্তন্যপায়ীদের মতো সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী। আর এই তথ্যই বিজ্ঞানীদের ধারণাকে সমর্থন করে যে কোনও এক সময়ে এই মহাদেশগুলো সংযুক্ত ছিল। এই ভাঙনের মূলে রয়েছে পূর্ব আফ্রিকান রিফ্ট সিস্টেম (EARS), একটি বিস্তীর্ণ ফল্ট লাইন বা চ্যুতি রেখা যা কেনিয়া, তানজানিয়া এবং ইথিওপিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়েছে, যেখানে আফ্রিকা মহাদেশ ধীরে ধীরে বিভক্ত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষয় হয়ে চলেছে আফ্রিকার। ফাটলও দেখা গিয়েছে বহুদিন আগেই। বিগত ২.৫ কোটি বছরে, আফ্রিকার টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে ফাটলটি বড়ো হয়ে দুটি স্বতন্ত্র প্লেট তৈরি করেছে- পশ্চিমে নুবিয়ান প্লেট এবং পূর্বে সোমালিয়ান প্লেট। এই বিভাজনটি আরও বড়ো হলে সমুদ্রের জল প্লাবিত হয়ে এই বিচ্ছিন্ন দুই ভূমিখন্ডের মধ্যে একটি নতুন মহাসাগর তৈরি করতে পারে। পৃথিবীর বিবর্তনের সঙ্গে তাল রেখে প্রতিসময় ধরে মহাদেশগুলোর মধ্যে প্লেট সরে যায়। তাই আফ্রিকার এই ভাঙন গোটা বিশ্বে নতুন দিক তৈরি করবে বলেই মনে করছেন ভূবিজ্ঞানীরা।
ভূবিজ্ঞানী ডেভিড অ্যাডেড বলেন যে পূর্ব আফ্রিকান রিফ্ট অঞ্চলে অনেক বেশি পরিমাণে টেকটোনিক পরিবর্তন এবং অগ্নুৎপাতের ঘটনা ঘটে। যদিও পৃষ্ঠঅঞ্চলে স্থানান্তর সীমিত, তবে গভীর ভূগর্ভস্থ শক্তি শেষ পর্যন্ত পৃষ্ঠে পৌঁছাতে পারে। ভূবিজ্ঞানীরা অবশ্য স্বীকার করেছেন যে ফাটলের গতিবিধি ভূগর্ভস্থ ফল্ট লাইনের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে, তবে এর সঠিক কারণটি আজও তদন্তাধীন রয়েছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন জলভাগের ভিতরে প্রায় ৪২০ টি ভূমিকম্প হয়েছে। ফলে আফ্রিকার এই ভাগের ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে এটি ভেঙে যাওয়ার ফলে আফ্রিকার ভৌগলিক পরিমাপ অনেকটাই পরিবর্তিত হবে।