সংকটে শিস-দেওয়া ব্যাঙ

সংকটে শিস-দেওয়া ব্যাঙ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২১ মে, ২০২৫

সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা দুটি শিস দেওয়া বন্য ব্যাঙ প্রজাতির সন্ধান পেয়েছেন। এরা ইতিমধ্যে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন আমরা হয়তো এদের সম্পর্কে পুরোটা জানার আগেই এরা বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। মূলত ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্যের উচ্চভূমির একটা সংকীর্ণ অংশে এদের বাস।
বিজ্ঞানীরা এদের সংকটের কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন, এরা কুইন্সল্যান্ড- এর উঁচু বনাঞ্চলগুলোতে খুব সীমিত পরিসরে বাস করে। সেখানে জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে তাদের বাসস্থান সংকুচিত হচ্ছে। দেখা গেছে ইউংগেলা হুইরিং ব্যাঙ (Litoria eungellensis) মাত্র ২১ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় টিকে আছে। পরিবর্তিত তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের ধরণ এদের বেঁচে থাকার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার, আথারটন হুইরিং ব্যাঙ (Litoria corberni) উত্তর কুইন্সল্যান্ড -এর একটি পৃথক অঞ্চলে বাস করে। এরাও এদের আত্মীয় ব্যাঙদের মতো উষ্ণ ও শুষ্ক পরিবেশে খাপ খাওয়াতে পারছে না, যা সংরক্ষণবিদদের উদ্বেগের কারণ।
এদের মধ্যে প্রতিটি প্রজাতির একটি স্বতন্ত্র ডাক আছে যা পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার বাকি সাধারণ ব্যাঙদের থেকে তাদের সহজেই আলাদা করে দেয়। এই স্বরভঙ্গির পার্থক্য ও জিনগত বৈষম্য লক্ষ্য করেই বিজ্ঞানীরা এদের পৃথক প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এদের রং সর্ষের মতো হলুদ থেকে শুরু করে পিছনের পায়ের টকটকে লাল বর্ণ পর্যন্ত দৃশ্যমান। তবে এই রঙের সমাহার তাদের পাতা ও গাছের বাকলের মধ্যে মিশে যেতে সাহায্য করে যাকে ছদ্মবেশ ধারণ বলা হয়। কিন্তু এটা তাদের তাপপ্রবাহ অথবা দাবানলের বিরুদ্ধে কোন সুরক্ষা প্রদান করে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে এই ব্যাঙগুলোর আবিষ্কার অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীন জলবায়ু সম্পর্কে নতুন আলোকপাত করেছে। শুধু গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গমন নয়, বৈশ্বিক বায়ুপ্রবাহ পরিবর্তনের উপর এই প্রজাতিগুলির টিকে থাকার সম্ভাবনা নির্ভর করে। একটি বড় পরিবেশগত বিপর্যয় এদের বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিতে পারে।
সংখ্যায় কম ও সংকীর্ণ আবাসস্থল থাকার কারণে আই ইউ সি এন (IUCN) এর নির্দেশিকা অনুসারে এরা অত্যন্ত বিপন্ন। এরা অন্যত্র স্থানান্তরিতও হতে পারে না কারণ তাদের বেঁচে থাকার জন্য নির্দিষ্ট আর্দ্রতা ও উচ্চতার প্রয়োজন যা প্রকৃতি তাদের দিতে পারছে না। কিছু উভচর প্রাণী হাজার বছরের মধ্যে তাপমাত্রার পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। কিন্তু এই দ্রুত পরিবর্তন বিচ্ছিন্ন ছোট গোষ্ঠীর পক্ষে মানিয়ে নেওয়া মারাত্মক কঠিন।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পার্বত্য অঞ্চলের সংরক্ষণ ও আর্দ্রতা বজায় রাখার ব্যবস্থা ব্যাঙগুলোর টিকে থাকার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। সংরক্ষিত এলাকা তৈরি ও পর্যবেক্ষণ করলে আকস্মিক আবাসস্থল ধ্বংসের ঝুঁকি কম হতে পারে। এই সংকটাপন্ন ব্যাঙগুলোর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে, জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা এবং তাদের সংরক্ষণের প্রচেষ্টার উপর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 + fifteen =