ইউসি সান ফ্রান্সিসকোর নতুন গবেষণা অনুসারে, বেশিরভাগ সংকটজনক কোভিড রোগীর ক্ষেত্রে অসুস্থতা সেরে যাওয়ার পরেও করোনা ভাইরাস রোগীদের রক্ত এবং কলাতে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে থাকতে পারে। এই গবেষণা সম্ভাব্য সূত্র দেয় কেন কিছু ব্যক্তির লং কোভিড দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা, SARS-CoV-2-এর অংশ যা বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় কোভিড অ্যান্টিজেন নামে পরিচিত, সংক্রমণের ১৪ মাস পরেও ব্যক্তির রক্তে পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং কোভিড-এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের কলার নমুনায় দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে দেখতে পেয়েছেন। ইউসিএসএফ স্কুল অফ মেডিসিনের সংক্রামক রোগ সংক্রান্ত গবেষক, এমডি মাইকেল পেলুসোর মতে দুটি গবেষণাই প্রমাণ করে যে স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা সত্ত্বেও কিছু লোকের মধ্যে কোভিড অ্যান্টিজেন বহু দিন ধরে টিকে থাকতে পারে। সম্প্রতি ডেনভারে অনুষ্ঠিত কনফারেন্স অন রেট্রোভাইরাস অপরচুনিস্টিক ইনফেকশানস-এ গবেষণার ফলাফল উপস্থাপিত হয়েছিল। মহামারীর শুরুর দিকে, বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন কোভিড ১৯ একটি ক্ষণস্থায়ী সাময়িক অসুস্থতা। কিন্তু ক্রমবর্ধমান সংখ্যক রোগী, এমনকি যারা আগে সুস্থ ছিলেন, তাদেরও কয়েক মাস বা এমনকি বছর ধরে স্মৃতিশক্তির সমস্যা, মানসিক অস্বচ্ছতা বা মনঃসংযোগ করতে না পারা, হজমের সমস্যা এবং রক্তনালীর সমস্যার মতো বিভিন্ন লক্ষণ দীর্ঘকাল ধরে দেখা গেছে।
গবেষকরা কোভিড-এ সংক্রামিত ১৭১ জনের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করেছেন। কোভিড “স্পাইক” প্রোটিন যা ভাইরাসকে মানব কোশের ভিতরে ঢুকতে সাহায্য করে তার একটি অতি-সংবেদনশীল পরীক্ষা ব্যবহার করে গবেষকরা দেখেছেন যে কিছু মানুষের মধ্যে ভাইরাসটি ১৪ মাস পরেও দেখা গেছে। যারা কোভিডে আক্রান্ত হয়ে সংকটজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তাদের মধ্যে কোভিড অ্যান্টিজেন শনাক্ত করার সম্ভাবনা, যারা সংকটজনক ছিল না তাদের থেকে প্রায় দ্বিগুণ বেশি । একজন চিকিত্সক হিসাবে পেলুসো মনে করেন বিষয়টি উদ্বেগের কারণ যে ব্যক্তি কোভিডে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ ছিল তার শরীরে অনেক বেশি পরিমাণে অ্যান্টিজেন উপস্থিত যা পরিবেশে ছড়িয়ে যেতে পারে। যেহেতু ভাইরাসটি আক্রান্ত রোগীর কলায় আনেক দিন ধরে টিকে থাকে তাই গবেষকরা UCSF এর লং কোভিড টিস্যু ব্যাঙ্কের সাহায্য নিয়েছেন। সংক্রমণের পর দুই বছর পর্যন্ত গবেষকরা ভাইরাল RNA-এর কিছু অংশ শনাক্ত করেছেন, যদিও সেই ব্যক্তি পুনরায় সংক্রমিত হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ তারা পাননি। যোজক কলা, যেখানে ইমিউন কোশ অবস্থিত, সেখানে গবেষকরা ভাইরাল RNA খুঁজে পেয়েছেন। কিছু নমুনায়, গবেষকরা দেখেছেন যে ভাইরাসটি সক্রিয় ছিল। তবে এই টুকরোগুলো লং কোভিড এবং হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকির মাত্রাকে বৃদ্ধি করে কিনা তা নির্ধারণের জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন। এই ফলাফলের উপর ভিত্তি করে, গবেষকের দল একাধিক ক্লিনিকাল ট্রায়ালে পরীক্ষা করছেন যে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ, ভাইরাসকে অপসারণ করতে সক্ষম কিনা এবং লং কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে কিনা।