
বিশ্বের বৃহত্তম এবং প্রাচীনতম হিমশৈলের মধ্যে একটি হল ‘এ ২৩’। সংঘর্ষের প্রবল সম্ভাবনা নিয়ে, আপাতত আন্টার্টিকা থেকে সাউথ জর্জিয়ার দিকে উত্তর মুখে এটি ভাসমান। বিপদে পড়তে পারে, শত শত পেঙ্গুইন এবং সীলমাছ । হিমশৈলটি আটকে পড়লেই পরবর্তীকালে সেটি টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়তে পারে। বিশ্বজুড়ে একদল বিজ্ঞানী, নাবিক এবং মৎস্যজীবী এই হিমশৈলের দৈনিক গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে চলেছেন স্যাটেলাইট চিত্রের মাধ্যমে। ১৯৮৬ সালে কুমেরু অঞ্চলের ফিলচনার আইস শেলফ থেকে বিচ্ছিন্ন হয় হিমশৈলটি। গত ডিসেম্বরে সামুদ্রিক ঘূর্ণি থেকে মুক্ত হয়ে এখন ভাসমান অবস্থায়, বিলীন হওয়ার পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। কুমেরুর এই অঞ্চলটি একটি মূল্যবান কিং পেঙ্গুইন বসতি । তাছাড়া এটি লক্ষ লক্ষ এলিফ্যান্ট সীল এবং ফার সিলের এক বিশাল বসতি। অতীতেও, ২০০৪ সালে, এ ৩৮ নামক একটি হিমশৈল, মহাদেশীয় তটভূমিতে আটকে গেলে, এই সমস্ত বন্যপ্রাণীগুলির খাবার সংগ্রহে ব্যাপক অসুবিধা হয়েছিল । ফলস্বরূপ অসংখ্য পেঙ্গুইন, পাখি ও সীলমাছ মারা যায়। নাবিক ও মৎস্যজীবীরা মনে করেন, হিমশৈলগুলি ক্রমবর্ধমান সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবে এই হিমশৈল সাউথ জর্জিয়া এবং স্যান্ডউইচ দ্বীপকে তেমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। এ প্রসঙ্গে সামুদ্রিক পরিবেশবিদ, মার্ক বেলচিয়ার জানিয়েছেন, ” সাউথ জর্জিয়ার মৎস্য এবং বন্যপ্রাণী উভয়েরই খাপ খাইয়ে নেওয়ার চমৎকার ক্ষমতা রয়েছে।”
হিমশৈল গলে, কার্বনচক্রে কি প্রভাব আনতে পারে? ‘ওশান আইস’ প্রকল্পের সহনেতৃত্বে থাকা ড: এন্ড্রু নেইজ্জার্স এবং পিএইচ ডি গবেষক লরা টেলার, হিমশৈলের টুকরো কেমব্রিজের ল্যাবে এনে নমুনা হিসেবে বিশ্লেষণ করেন। তাদের মনে হয়, পুষ্টি উপাদান এবং রাসায়নিক পদার্থে পূর্ণ হিমশৈল গলা জল সমুদ্রে মিশলে, সমুদ্রজলের ভৌত এবং রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন আসতে পারে। তাছাড়া হিমশৈলগুলির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইটোপ্ল্যাংকটন আছে, তারা সমুদ্রের গভীরে আরো কার্বন সঞ্চয় করবে। যা জলবায়ুর পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এ বিষয়ে উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী কার্বন ধরা এবং সঞ্চয় করার কাজে ফাইটোপ্ল্যাংকটন ৪০ শতাংশ অবদান রাখে।
বর্তমানে যে উষ্ণতার বৃদ্ধি ও তার প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বিশেষত কুমেরু অঞ্চলের সমুদ্র এবং বায়ুর উষ্ণতার পারদ যেভাবে চড়ছে, তাতে ভবিষ্যতে বিশালাকার হিমশৈলগুলি আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।