সকল প্রাণীর একই রোগ!

সকল প্রাণীর একই রোগ!

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২০ নভেম্বর, ২০২৫

বিশ্বজুড়ে এখন দেখা যাচ্ছে এক বিস্ময়কর এবং যথেষ্ট উদ্বেগজনক প্রবণতা। গৃহপালিত বিড়াল, কুকুর থেকে শুরু করে দুগ্ধবতী গাভী, শূকর, এমনকি তিমি ও সামুদ্রিক কচ্ছপ পর্যন্ত মানুষের মতোই আক্রান্ত হচ্ছে ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, স্থূলতা, আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি দীর্ঘস্থায়ী অসংক্রামক রোগে। একটা সময় মনে করা হতো এই রোগগুলো হয়তো শুধু মানুষেরই হয়, আজ সেই ভেদ ঘুচে গেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর জন্য দায়ী মূলত মানুষ ও তার পরিবেশবিধ্বংসী কার্যকলাপ।

গ্রিসের এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটি অব এথেন্স-এর প্রাণীবিজ্ঞানী অ্যান্টোনিয়া মাতারাগকা পরিচালিত এক সাম্প্রতিক গবেষণার বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে রিস্ক অ্যানালিসিস জার্নালে। এই গবেষণায় প্রাণীর দীর্ঘস্থায়ী রোগ শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি নতুন “ঝুঁকি মূল্যায়ন কাঠামো”র প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি থেকে দেখা যায়, মানুষ ও প্রাণী উভয়ের মধ্যেই একই ধরনের রোগ বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে মিলিত জৈবিক ও পরিবেশগত কারণ।

মাতারাগকার গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাণীর জিন গঠন অনেক ক্ষেত্রে রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। নির্বাচিত প্রজননের কারণে বিশুদ্ধ জাতের বিড়াল, কুকুর এবং অতিরিক্ত উৎপাদনক্ষম গবাদি পশুদের মধ্যে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের হার বেশি।

তাছাড়া, অপুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস, কম চলাফেরা, এবং মানসিক চাপ—এই তিনটি কারণ মানুষ ও প্রাণী উভয়ের ক্ষেত্রেই এখন সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে অর্ধেকেরও বেশি পোষা বিড়াল ও কুকুর স্থূলতায় ভুগছে, যা থেকে ডায়াবেটিসের প্রবণতা বাড়ছে। খামারে পালিত শূকরদের প্রায় ২০ শতাংশের মধ্যে দেখা যাচ্ছে অস্থিসন্ধির ক্ষয়।

সমুদ্রজ প্রাণীদের মধ্যেও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক—বেলুগা তিমির পাচনতন্ত্রে ক্যান্সার, আর ফার্মে পালিত অ্যাটলান্টিক স্যামন মাছের মধ্যে হৃদরোগ দেখা গেছে। দূষিত মোহনায় থাকা বন্য প্রাণীদের লিভারে টিউমারের হার ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত।

গবেষণায় বলা হয়েছে, মানুষের কার্যকলাপ যেমন—নগরায়ন, অরণ্যচ্ছেদন, জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণ—এসবের কারণে প্রাণীদের রোগ বাড়ছে। উষ্ণ সমুদ্র ও প্রবাল ধ্বংস মাছ ও সামুদ্রিক কচ্ছপের টিউমার বাড়াচ্ছে। শহুরে দূষণ ও গরমের চাপ পোষা প্রাণীর স্থূলতা, ডায়াবেটিস এবং প্রতিরোধক্ষমতা হ্রাসের কারণ হয়ে উঠছে।

 

এই গবেষণায় মানুষ, প্রাণী ও পরিবেশের স্বাস্থ্যকে একসঙ্গে বিবেচনা করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ‘ওয়ান হেল্থ’ ও ‘ইকোহেল্থ’ নামক দুইটি ধারণাকে একত্র করে মাতারাগকা এমন একটি মডেল তৈরি করেছেন, যা দেখায়—জিন ঘটিত দুর্বলতা, পরিবেশগত চাপ ও সামাজিক পরিবর্তন একত্রে রোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করে।

তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, এই সমন্বিত পদ্ধতি ভবিষ্যতে প্রাণী ও মানুষের রোগের আগাম সংকেত শনাক্ত করতে সহায়তা করবে এবং পৃথিবীর সার্বিক জীববৈচিত্র্য ও স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

 

সূত্র: Why Cats, Dogs, and Even Whales Are Getting Human Diseases by SOCIETY FOR RISK ANALYSIS, NOVEMBER 11, 2025.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 4 =