সন্ধান মিলল মাকড়সার ঘ্রাণশক্তির

সন্ধান মিলল মাকড়সার ঘ্রাণশক্তির

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ জানুয়ারী, ২০২৫

ঘরের কোণে, জানলার গ্রিলে, ঘরের ঘুলঘুলিতে প্রায়শই জাল বোনে মাকড়সা। মূলত খাবার এবং আশ্রয়ের সন্ধানেই। পোকামাকড় খেয়েই বেঁচে থাকে এরা। মাকড়সা মূলত মাংসাশী। জীবন্ত পোকামাকড় অথবা শিকার করে পোকামাকড় মেরে খেতেই ভালোবাসে। পিঁপড়ে, মাছি, মশা, মথ, ছোটো ছোটো পোকা, আরশোলা এ সবই খায় মাকড়সা। এই মাকড়সা ঘিরে বিজ্ঞানীদেরও কাজের অন্ত নেই। তবে দীর্ঘদিন ধরেই মাকড়সার গন্ধ শনাক্ত করার বিষয়টি রহস্যাবৃত। এক নতুন গবেষণায় গবেষকরা সেই রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করেছেন। প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায়, গবেষকরা দেখেছেন যে পুরুষ মাকড়সাদের পায়ে ঘ্রাণের জন্য সরু সরু রোমের মতে জিনিস রয়েছে যাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ওয়াল-পোর সেনসিলা। এটি তারা নাকের মতো ব্যবহার করে স্ত্রী মাকড়সার শরীর থেকে নির্গত রাসায়নিক বা সেক্স ফেরোমোন শনাক্ত করে।
প্রায় ৪০ কোটি বছর ধরে মাকড়সা বিবর্তিত হচ্ছে। এরা মূলত কম্পন অনুভূতি উপলব্ধি করার জন্য বিখ্যাত তবে কিছু মাকড়সা যারা জাম্পিং স্পাইডার নামে পরিচিত তারা তাদের চমৎকার দৃষ্টিশক্তির জন্যও বিখ্যাত তবে, আশ্চর্যজনকভাবে তাদের ঘ্রাণশক্তি সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের খুব কম ধারণা রয়েছে। মাকড়সা যে সেক্স ফেরোমোনসের মতো কিছু গন্ধ শনাক্ত করতে পারে তার প্রচুর প্রমাণ বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন, তবে দুটি প্রশ্নের উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। প্রথমত, পোকামাকড়দের মতো মাকড়সারও কোনো শুঁড় বা অ্যান্টেনা নেই, তাই ঘ্রাণ নেওয়ার জন্য তারা কোন অঙ্গ ব্যবহার করে? আর দ্বিতীয়ত, পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে মাকড়সার ওয়াল-পোর সেনসিলা নেই, আর এই বিশেষ কাঠামো দিয়েই পোকামাকড় গন্ধ পেয়ে থাকে। তবে মাকড়সা কীভাবে গন্ধ শনাক্ত করে?
এই গবেষণায় গবেষকরা আর্জিওপ ব্রুয়েনিচি নামে এক প্রজাতির পুরুষ মাকড়সার পায়ে ওয়াল-পোর সেনসিলা আবিষ্কার করেছেন এবং এর সাহায্যে মাকড়সারা বায়ুবাহিত সেক্স ফেরোমোন শনাক্ত করতে পারে। গবেষকরা আরও দেখেন এই ওয়াল-পোর সেনসিলা শুধু এই প্রজাতির মাকড়সার ক্ষেত্রেই নয় বেশিরভাগ পুরুষ মাকড়সার ক্ষেত্রেই তাদের পায়ে দেখা যায়। তবে, এশিয়ায় পাওয়া বেসাল ট্র্যাপডোর মাকড়সার মতো কিছু প্রজাতির মাকড়সাদের এই সেনসিলা নেই। গবেষকরা যে প্যাটার্ন দেখতে পেয়েছেন তা থেকে এটা স্পষ্ট বোঝা যায় যে ওয়াল-পোর সেনসিলা মাকড়সার মধ্যে একাধিকবার স্বাধীনভাবে বিবর্তিত হয়েছে আবার কিছু প্রজাতিতে হারিয়েও গেছে।