সবুজ বাজির হারিকিরি

সবুজ বাজির হারিকিরি

অভিজিৎ চৌধুরী
Posted on ৫ নভেম্বর, ২০২২

গত ২৬ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণের পক্ষ থেকে আসন্ন কালীপুজো, দীপাবলী, ছট সহ অন্যান্য অনুষ্ঠান ও উৎসব উপলক্ষে বাজির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক একটি নির্দেশনামা প্রকাশিত হয়েছে । এই নির্দেশনামায় ঘোষিত হয়েছে যে এই বিশেষ দিনগুলিতে কেবলমাত্র ‘সবুজ বাজি’-ই ফাটানো যাবে এবং কোন নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে এই বাজি ফাটানোর কাজটি করা যাবে তাও জানানো হয়েছে । এই নির্দেশের কথা শুনে মানুষ সম্পূর্ণভাবে বিভ্রান্ত । কেউই বুঝে উঠতে পারছেন না “সবুজ বাজি” বলতে ঠিক কোন বা কোন কোন বাজির কথা বলা হয়েছে । একইভাবে বিভ্রান্তির শিকার বাজি বিক্রেতারাও । আমাদেরও জানা নেই তথাকথিত এই ‘সবুজ বাজি’-র কোন নির্দিষ্ট তালিকা প্রশাসনিক কোন দপ্তর থেকে প্রকাশিত হয়েছে কি না । আমরা এও জানিনা স্থানীয় প্রশাসন কিংবা পুলিশ আধিকারিকরাও এই বিষয়ে ঠিক কতখানি ওয়াকিবহাল ! আমাদের আশঙ্কা, রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা বেআইনি বাজি কারখানাগুলিতে তৈরি নিষিদ্ধ বাজির আনাগোনা এবং ব্যবহার, এর ফলে, উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাবে । সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে বলা যেতে পারে যে নুঙ্গি, বজবজ, চম্পাহাটি, হারাল, সোনারপুর, বালি, বেলুর, চণ্ডীতলা, বেগমপুর, নৈহাটি, নীলগঞ্জ, বারাসত প্রভৃতি অঞ্চলে বেশ কিছু এই ধরণের বেআইনি বাজি তৈরির কারখানা রয়েছে। বাজি নিয়ন্ত্রণে পশ্চিমবঙ্গ দেশের মধ্যে একসময়ে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছিল । কোলকাতা হাইকোর্টের রায়ে বলীয়ান হয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ শব্দবাজি নিয়ন্ত্রণে দৃষ্টান্তমূলক কাজ করেন । পশ্চিমবঙ্গের দৃষ্টান্তকে সামনে রেখে পরবর্তীসময়ে সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়েই বাজি নিয়ন্ত্রণের কাজ চলতে থাকে। এই বিষয়ে সুপ্রিমকোর্ট অথবা হাইকোর্টের তাৎপর্যপূর্ণ। রায়গুলি ঘোষিত হয়েছিল করোনা আক্রমণের বহু আগে। বর্তমানের এই করোনা আবহে দূষণ সৃষ্টিকারী সকলপ্রকার শব্দবাজি ও আতশবাজির কঠোরতর নিয়ন্ত্রণ আবশ্যক বলে মনে করছেন পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। যেখানে গতবছর সাধারণ মানুষ এবং প্রশাসনের সদর্থক ভূমিকা বেশ কিছুটা আশা জাগিয়ে ছিল, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সাম্প্রতিক ঘোষণা মানুষের মনে নানাবিধ আশঙ্কার জন্ম দিচ্ছে দুর্ভাগ্য এবং বিস্ময়ের বিষয় হল দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এই নির্দেশনামায় উল্লেখিত হয়েছে “cracker” শব্দটি যার অর্থ হল শব্দবাজি। হাইকোর্টের আদেশ অনুসারে যে শব্দবাজি এতদিন যাবৎ প্রায় নিষিদ্ধ ছিল, আমাদের আশঙ্কা, এই নতুন নির্দেশের ফলে সেই শব্দবাজিকেই ঘুরপথে একধরনের ছাড়পত্র দেওয়া হয়ে গেলো না তো ! আমরা এও মনে করি যে এই নির্দেশনামা সুপ্রিমকোর্ট ঘোষিত রায়ের অবমাননার নামান্তর। মূল প্রশ্ন হল দূষণমুক্ত পরিবেশ এবং জনগণের জন্য সুস্বাস্থ্য । সেই দিক থেকে বিচার করলে এখনও খুব দেরি হয়ে যায়নি। আমরা আশা করছি যে জরুরি ভিত্তিতে সমগ্র পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন । আমরা মনে করি, আর কালক্ষেপ না করে অবিলম্বে সবরকমের দূষণসৃষ্টিকারী শব্দবাজি ও আতশবাজিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ জারি করা হোক ।