সবুজ সাহারার মানব জিনোম

সবুজ সাহারার মানব জিনোম

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

আজ যে সাহারা মরুভূমিকে আমরা নির্জন নিষ্ফল প্রান্তর হিসেবে চিনি, প্রায় ৭,০০০ বছর আগে সেখানে ছিল প্রাণবন্ত এক সবুজ ভূদৃশ্য – হ্রদ,ও ঘাসে মোড়া বিস্তীর্ণ তৃণভূমি। লিবিয়ার তাকারকোরি রক শেল্টারে দুটি নারীর প্রাকৃতিকভাবে সংরক্ষিত দেহাবশেষ এই হারিয়ে যাওয়া সবুজ সাহারার বাসিন্দাদের প্রথম প্রাচীন জিনগত পরিচয় তুলে ধরেছে। আধুনিক গবেষণায় এটি মধ্য সাহারা থেকে সংগৃহীত প্রথম মানব জিনোম।

এই গবেষণার নেতৃত্ব দেন জার্মানির ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউটের জিনতত্ত্ববিদ নাদিয়া সালেম। তিনি আফ্রিকার প্রাচীন জনসংখ্যা ইতিহাস পুনর্গঠনের জন্য বহু পুরোনো ডিএনএ বিশ্লেষণ করেন। বৈজ্ঞানিক নথি জানায় যে ১৪,৫০০ থেকে ৫,০০০ বছর আগের “আফ্রিকান হিউমিড পিরিয়ডে” উত্তর আফ্রিকা ছিল আজকের তুলনায় অনেক বেশি আর্দ্র। তাকারকোরি পাহাড়ি আশ্রয়স্থল তখন ছিল সবুজ উষ্ণ মণ্ডলীয় তৃণভূমি আর ছোট ছোট মিষ্টি জলের হ্রদে ভরা এক উর্বর এলাকা।

তখনকার মানুষজন প্রথমে শিকারি-সংগ্রাহক হলেও পরে গরু, ভেড়া, ছাগল পালনের ওপর নির্ভরশীল যাযাবর পশুপালকে পরিণত হয়। যে দুটি নারীর অবশিষ্টাংশ বিশ্লেষণ করা হয়েছে, তাঁদের সম্প্রদায় ছিল স্থায়ী পশুপালক। কবরস্থানে নারী ও শিশুদের আধিক্য, পাশাপাশি দাঁত ও হাড়ের রাসায়নিক বিশ্লেষণ, থেকে বোঝা যায়, তাঁরা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাকারকোরি অঞ্চলেই অবস্থান করেছেন। এটি ছিল একটি স্থিত জনবসতি, কোনো অস্থায়ী যাযাবর গোষ্ঠীর বিরাম স্থান নয়।

ডিএনএ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দুই নারীর শরীরে ছিল এক প্রাচীন উত্তর আফ্রিকান বংশধারা। যা আজ আর কোনো জনগোষ্ঠীতে বিশুদ্ধভাবে দেখা যায় না। এই বংশের বিভাজন ঘটে প্রায় ৫০,০০০ বছর আগে, ঠিক যখন আধুনিক মানুষ আফ্রিকা ছেড়ে পৃথিবীর নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়ছিল। পরবর্তী অভিবাসনের ঢেউ এই বংশের বিশুদ্ধতা কমিয়ে দিয়েছে, তবুও তার শক্তিশালী জিনগত ছাপ আজও উত্তর আফ্রিকার বহু জনগোষ্ঠীতে টিকে আছে।

মরক্কোর ১৫,০০০ বছর পুরোনো তাফোরাল্ট গুহার মানুষের সঙ্গে তাকারকোরি জনগোষ্ঠীর জিনগত মিল পাওয়া গেছে। তবে আশ্চর্যের বিষয়, সাহারা যখন সবুজ ছিল তখনও উত্তর ও দক্ষিণ আফ্রিকার জনগোষ্ঠী পরস্পরের সঙ্গে পুরোপুরি মিশে যায়নি। নদী ও হ্রদ যোগাযোগের পথ হলেও জিনগত সীমারেখা বজায় ছিল।

গবেষণায় আরও দেখা যায়—পশুপালন এ অঞ্চলে ছড়ায় মূলত কৃষ্টি বিনিময়ের মাধ্যমে, বৃহৎ জনসমাগম বা অভিবাসনের মাধ্যমে নয়। লেভান্ত অঞ্চলের কিছু জিনগত চিহ্ন থাকলেও তা খুবই সামান্য।

তাকারকোরির এই আবিষ্কার থেকে দেখা যায়, সাহারা সবুজ থাকুক বা মরুভূমি, মানুষের প্রাচীন বংশধারা বহু হাজার বছর ধরে নিজের স্বাতন্ত্র্য টিকিয়ে রেখেছিল। ভবিষ্যতে এমন আরও আবিষ্কার আফ্রিকার মানুষের জটিল ইতিহাসকে স্পষ্টতর করে তুলবে।

সূত্র: Ancient DNA from the Green Sahara reveals ancestral North African lineage by Nada Salem, Marieke S. van de Loosdrecht, et.al; published in Nature, 2nd April,2025.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 1 =