সমাধান-ভিত্তিক শিক্ষা ও শেখার আবেগ

সমাধান-ভিত্তিক শিক্ষা ও শেখার আবেগ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২ মার্চ, ২০২৫

দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অংশগ্রহণের হার এবং সৃজনশীলতা উন্নত করার লক্ষ্যে ইস্কুলগুলিকে ‘সমস্যা-ভিত্তিক শিক্ষা’র কথা ভাবতে উৎসাহিত করছেন । এই প্রস্তাবের নেপথ্যে রয়েছে সাম্প্রতিক উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান । প্রডাক্টিভিটি কমিশনের তথ্যানুসারে, ক্লাস সেভেনে ৮৮.৮ শতাংশ উপস্থিতির হার থাকলেও, তা দশম শ্রেণীতে ৮৪ শতাংশে নেমে এসেছে। সরকারি ইস্কুলগুলোতে অবস্থা আরও ভয়াবহ। যেখানে মাত্র ৭৩ শতাংশ ছাত্রছাত্রী দ্বাদশ শ্রেণীর গণ্ডি অবধি পৌঁছেছে। ২০১৭ সালে পৌঁছেছিল ৮০ শতাংশ। অর্থাৎ ইস্কুল ছুটের সংখ্যা বেশ বাড়ছে।
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, হাতে-কলমে শিক্ষা বা কারিগরি শিক্ষা এবং সম্প্রদায়-ভিত্তিক প্রকল্পগুলি, এই ইস্কুলছুট ছাত্রছাত্রীদের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। এই গবেষণায় তিনটি মূল সিদ্ধান্ত উঠে এসেছে। প্রথমত, যখন শিক্ষার্থীরা বাস্তবক্ষেত্রে, প্রকল্পের মধ্য দিয়ে হাতে-কলমে অংশগ্রহণ করে, তখন তাদের পড়াশোনা সম্পূর্ণ করার সম্ভাবনা বা ইচ্ছা বেড়ে যায়। তত্ত্বের পরিবর্তে বাস্তব অভিজ্ঞতা তাদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করে তোলে। দ্বিতীয়ত, যখন শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষার উপর নিজেদেরই নিয়ন্ত্রণ অনুভব করে, তখন তাদের আত্মবিশ্বাস ও অনুপ্রেরণা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। তৃতীয়ত, যখন শিক্ষার্থীরা তাদের সম্প্রদায়ের উন্নয়নে অবদান রাখে, তখন তারা তাদের শিক্ষাকে অর্থবহ মনে করে। এই অর্থবোধ, শিক্ষার সাথে তাদের এক গভীর সংযোগ গড়ে তোলে। গবেষকরা সরকারের ৪.৮ কোটি ডলার বিনিয়োগ পরিকল্পনার সমর্থনে একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প পরিচালনা করেন । এতে, ইস্কুলছুট ছাত্রছাত্রীদের একটি স্বল্প আয়ের ইস্কুলের জন্য খেলার মাঠ তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই ছাত্রছাত্রীরা ডিজাইন ও প্রযুক্তি বিভাগের। এদের কাজ শুধুমাত্র খেলার মাঠ নির্মাণ করাই ছিল না। এ সম্পর্কিত গবেষণা, পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন – সবকিছুই নিজেদের করতে হয়েছিল। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ ক্রিস চিমওয়ায়াঙ্গে এই প্রকল্পের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে বলেন, “শিক্ষাকে বাস্তব জীবনের সমস্যার সাথে সংযুক্ত করলে, শিক্ষার্থীরা তাদের তাত্ত্বিক জ্ঞানের প্রয়োগ সরাসরি দেখতে পায়। এটি তাদের শিক্ষাকে আরও অর্থবহ করে তোলে”। ডঃ চিমওয়ায়াঙ্গে উল্লেখ করেন, অস্ট্রেলিয়ার প্রায় ২০ শতাংশ এবং নিউজিল্যান্ডের ২৫-৩০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী ইস্কুল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে মূলত বাস্তব প্রয়োগহীন পাঠক্রমের কারণে। তিনি আরও জানান, শিক্ষাদান ও শিক্ষণ পদ্ধতিগুলিকে প্রচলিত পাঠ্যক্রমের থেকে ভিন্নভাবে দেখলে সেই বিকল্পটি শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতে পারে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে, ছাত্রছাত্রীরা নানা ধরনের দক্ষতা অর্জন করে। যথা লক্ষ্য নির্ধারণ , বাজার সমীক্ষন (মার্কেট রিসার্চ), বিদ্যমান সমস্যার সমাধান ও সম্ভাব্য চাহিদা চিহ্নিত করা। এমনকি সম্প্রদায় ভেদে সেরা সমাধানটি খুঁজে বের করা। এই প্রকল্পে ছাত্রছাত্রীদের নিজস্ব পছন্দ ও নিয়ন্ত্রণ গুরুত্ব পাওয়ায়, তাদের মধ্যে সমালোচনাত্মক চিন্তাভাবনা, আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি, সহযোগিতা ও নেতৃত্বের গুণাবলীও বিকশিত হয়েছে। এর আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হল, এই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে শেখার আবেগ পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, “যদিও এই প্রকল্পটি ডিজাইন ও প্রযুক্তির উপর কেন্দ্রিত ছিল, কিন্তু একই নীতিগুলি অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষাতেও প্রয়োগ করা যেতে পারে”। শিক্ষাবিদ ও নীতি নির্ধারকদের প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতি পুনর্বিবেচনা করতে এবং সমস্যা-ভিত্তিক শিক্ষাকে ‘ইস্কুলছুটের সমাধান’ হিসেবে বিবেচনা করতে, এই গবেষণা উৎসাহিত করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 3 =