সমুদ্রবক্ষে দানবীয় ঢেউ

সমুদ্রবক্ষে দানবীয় ঢেউ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২ আগষ্ট, ২০২৫

সমুদ্রের মাঝবরাবর জাহাজ চলতে চলতে হঠাৎ আশপাশ থেকে অপ্রত্যাশিত ভাবে প্রবল জলোচ্ছ্বাস আছড়ে পড়ল। সেই ধরনের ঢেউগুলোকে বলে দানবীয় ঢেউ। এই ঢেউগুলো সাধারণ ঢেউয়ের তুলনায় দু-তিন গুণ বেশি শক্তিশালী ও উঁচু হয়। বহু শতাব্দী ধরে নাবিকদের গল্পে কথিত এই ভয়াল ঢেউগুলোকে কল্পনা বলেই মনে করা হতো। কিন্তু ১৯৯৫ সালে যখন নরওয়ের উপকূলে ৮৫ ফুট উচ্চতার “ড্রাউপনার ওয়েভ” আছড়ে পড়ল, সেটা এর প্রথম বৈজ্ঞানিক প্রমাণ হিসেবে নথিভুক্ত হল। বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এই দানবীয় ঢেউ নিয়ে বিজ্ঞানীরা নতুন তথ্য তুলে ধরেছেন।
সম্প্রতি কানাডার ভ্যানকুভার দ্বীপের উপকূলে উক্লুয়েলেট ওয়েভ নামে ৫৮ ফুট উচ্চতার একটি ঢেউ আছড়ে পড়ে, যা আশেপাশের ঢেউগুলির চেয়ে তিন গুণ বড় ছিল। এই ঘটনাকে বিজ্ঞানীরা ইতিহাসের সবচেয়ে চরম জলোচ্ছ্বাস বলে মনে করছেন।
সৈকতের সাধারণ ঢেউ নিয়মিত এবং আগে থেকে অনুমান করাও যায়। কিন্তু এই বিপজ্জনক ঢেউ তৈরি হয় সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে, মাঝে মাঝেই হানা দেয় শান্ত সমুদ্রে। এদের সৃষ্টি হয় বিভিন্ন ঢেউয়ের সম্মিলিত শক্তি দিয়ে, যা এই ঢেউকে আরো শক্তিশালী করে তোলে।

অ্যান্টার্কটিকার জলে গবেষণা চালিয়ে ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্নের বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এই ধরনের ঢেউয়ের যৌবন পর্যায়ে যখন সেগুলি বেশি সংবেদনশীল থাকে, তখন বাতাস তাদের উচ্চতা বাড়াতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। বাতাসের কারণে ঢেউ বড়, দীর্ঘ ও দ্রুত হয় এবং আশেপাশের ঢেউয়ের শক্তি নিজের মধ্যে টেনে নেয়। এছাড়াও, ঢেউ বড় হলে তারা একে অপরের সঙ্গে জটিল মিথষ্ক্রিয়া করে। তাকে বলা হয় অরৈখিক প্রভাব ( ননলিনিয়ার এফেক্ট)। এতে ঢেউয়ের চূড়া তীক্ষ্ণতর হয়, মধ্যবর্তী খাঁজ গভীরতর হয়। বিজ্ঞানীরা মড্যুলেশনাল ইনস্টেবিলিটি নামের একটি প্রক্রিয়ার কথা বলেন। তাতে ঢেউগুলো একে অপরের শক্তি শোষণ করে বিশালাকার হয়ে ওঠে।
এখন গবেষকরা এই ধরনের দানবীয় ঢেউয়ের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য বায়ু ও ঢেউয়ের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করছেন। ক্রেস্ট-ট্রাফ (তুঙ্গ আর নিম্ন দেশ) কোরিলেশন নামক পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে ঢেউয়ের শীর্ষ ও মধ্যবর্তী খাঁজের সম্পর্ক মাপা যায়। তা থেকে সাগরের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা সম্পর্কে আগাম ধারণা পাওয়া সম্ভব।

উন্নত পূর্বাভাস ব্যবস্থায় ব্যবহৃত মডেলগুলি সমুদ্রে অপ্রত্যাশিতভাবে আসন্ন এই ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বড় পথনির্দেশক হতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

সূত্রঃ Scientific Reports , 21.7.2025.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − ten =