সমুদ্রের রঙ কী সবুজ হচ্ছে?

সমুদ্রের রঙ কী সবুজ হচ্ছে?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ জুলাই, ২০২৩

দু দশকের স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের গবেষকরা দেখেছেন যে পৃথিবীর মহাসাগরগুলো সবুজ হয়ে উঠছে। তাদের অনুমান জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্ব উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই সাগরে এই সবুজ আভা। উদ্ভিদের মতো শৈবাল সহ ক্ষুদ্র জীবাণুগুলো সালোকসংশ্লেষণের জন্য সবুজ ক্লোরোফিল ব্যবহার করে। তাই তাদের সংখ্যা যত বেশি হবে, তাদের আবাসস্থল তত সবুজ হবে। কিন্তু ‘একটা সবুজ পৃথিবী’ কথাটা শুনতে আকর্ষণীয় মনে হলেও, আসলে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের ঘনত্বের বৃদ্ধি সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের উপরে ধীরে ধীরে এক অন্যরকম প্রভাব ফেলছে। আমরা ইতিমধ্যে গরম বা তাপের কারণে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের বৃদ্ধির গুরুতর স্বল্পমেয়াদী প্রভাব প্রত্যক্ষ করছি। তাদের আকস্মিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আশেপাশে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা যায় এবং হাইপোক্সিক ডেড জোন তৈরি হয় যার প্রভাব থেকে প্রাণীরা পালাতে পারে না। কিন্ত সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বুঝতে গেলে আরও এক দশক অপেক্ষা করতে হবে।
রিমোট সেন্সিং রিফ্লেক্টেন্স অর্থাৎ প্রতিফলিত আলোর উপর ভিত্তি করে সমুদ্রের রঙিন ছবি এই কাজে সাহায্য করছে। বর্তমানে ক্লোরোফিল অনুমানের মতো পদ্ধতি ছাড়াও এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন জনসংখ্যা পরিমাপ করার চেষ্টা আরও সহজ বলে প্রতিপন্ন হয়েছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে সমুদ্র সবুজ হয়ে ওঠার পিছনে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনই একমাত্র কারণ। তারা দেখেছেন বিশেষ করে নিরক্ষরেখার চারপাশের সমুদ্রের রঙ সবুজ হয়ে উঠেছে। যেহেতু ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন CO2 শোষণ করে, তাদের বর্ধিত সংখ্যা একটা কার্বন সিঙ্ক তৈরি করেছে যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। কিন্তু যেহেতু ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন সমুদ্রের খাদ্য শৃঙ্খলের ভিত্তি আর তারা তাদের পরিবেশের তাপমাত্রা, পুষ্টির প্রাপ্যতা, জলের আলোর মাত্রার অনেকটাই পরিবর্তন করতে পারে, তাই এদের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন সম্পদেও ( যেমন মাছ প্রভৃতি) ব্যাপক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণাটি নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 1 =