সমুদ্রের শব্দ ঝিনুকদের কাছে কর্কশ হয়ে উঠছে – দায়ী মানুষ

সমুদ্রের শব্দ ঝিনুকদের কাছে কর্কশ হয়ে উঠছে – দায়ী মানুষ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৪ আগষ্ট, ২০২৪
ঝিনুক

সমুদ্র কখনও ফিসফিস করে, কখনও গুঞ্জরিত হয়, কখনও সে গর্জন করতে থাকে- তার নানা শব্দ জীবনের নিজস্ব কনসার্টের সাথে অনুরণিত হয়। কিন্তু মানুষের ক্রিয়াকলাপে তৈরি শব্দ দূষণ এই সুমধুর অর্কেস্ট্রা নষ্ট করতে শুরু করেছে। মানুষের এই শ্রুতিকটু শব্দ সমুদ্রের ছন্দ ভেঙে দিচ্ছে আর তা নানা সামুদ্রিক প্রাণীর জীবনে বিঘ্ন ঘটাতে শুরু করেছে। শিশু ঝিনুকরা এই বিরক্তিকর উচ্চশব্দে তাদের বাসস্থান খুঁজে পাচ্ছেনা। নানা সামুদ্রিক প্রাণীর মতো ঝিনুকও তার নিজস্ব পরিবেশে বেঁচে থাকতে নিজেদের জৈবিক কার্যকলাপ চালাতে প্রাকৃতিক শব্দ সংকেতের ওপর নির্ভর করে। অ্যাডিলেড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা জানাচ্ছে মানুষের কার্যকলাপের শব্দ সামুদ্রিক প্রাণীর প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াতে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। অ্যাডিলেড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউদার্ন সিজ ইকোলজি ল্যাবোরেটরিজ-এর ডক্টর ব্রিটানি উইলিয়ামস ব্যাখ্যা করেছেন আবাসস্থলের ক্ষতির কারণে সমুদ্রের প্রাকৃতিক শব্দ ধীরে ধীরে নিস্তব্ধ হচ্ছে, আর মানবসৃষ্ট শব্দ বাড়তে বাড়তে শান্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্রমশ দূষিত করছে।
অসংখ্য সামুদ্রিক লার্ভা প্রাকৃতিক শব্দের ওপর নির্ভর করে সমুদ্র চষে তাদের বাসস্থান নির্বাচন করে। কিন্তু মানুষের সৃষ্ট শব্দ ঝিনুককে সমুদ্রের স্বাভাবিক প্রাকৃতিক শব্দের ওপর নির্ভর করে তাদের বাসস্থানের স্তূপগুলো খুঁজতে বাধা দেয়। সামুদ্রিক প্রাণীর এই ক্ষতি নিয়ে সংরক্ষণবাদীরা প্রশ্ন তুলেছেন। শিপিং, যন্ত্রপাতি এবং নির্মাণ থেকে সৃষ্ট আওয়াজ বিস্তৃত গুরুতর পরিবেশগত শব্দের পরিবর্তন ঘটায় যা স্থলজ এবং সামুদ্রিক প্রাণী উভয়কেই প্রভাবিত করে। প্রসিডিংস অফ দ্য রয়্যাল সোসাইটি বি-তে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, সামুদ্রিক জীবগুলি নৃতাত্ত্বিক শব্দের তীব্রতার জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ সমুদ্রের প্রাকৃতিক শব্দ কাজে লাগিয়ে তারা বিভিন্ন জৈবিক ক্রিয়াকলাপ চালায়। তাদের আশেপাশের অবস্থা বোঝা, সমুদ্র তল চষা, নিজদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করা থেকে শুরু করে খাবার খুঁজতে, শিকারীদের হাত থেকে বাঁচতে, সাথী খুঁজে বের করতেও তাদের এই শব্দের সাহায্য প্রয়োজন।
অ্যাডিলেড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডমিনিক ম্যাকাফি জানিয়েছেন, তাদের আগের কাজে তারা অভিনব শাব্দিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বাসস্থান পুনরুদ্ধার করতে ঝিনুকের লার্ভাদের কাজে লাগাতে পেরেছিলেন, যা ঝিনুকদের বাসস্থান খুঁজতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু বর্তমান গবেষণা শাব্দিক প্রযুক্তির সম্ভাব্য সীমাবদ্ধতা দেখাচ্ছে। মানুষের সৃষ্ট শব্দ দূষণ বেশি হলে ঝিনুকের লার্ভারা আসছেনা। গবেষকদের মতে শব্দ দূষণ সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের প্রাণশক্তি এবং স্থিতিস্থাপকতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। সমুদ্রতট থেকে সমুদ্রের গভীরে গেলে মানুষের শব্দ কমে। সেখানে গবেষকদের শব্দ সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়ার সাহায্যে ঝিনুকের বাসস্থান পুনরুদ্ধার করা সফল হবে। মানবসৃষ্ট শব্দ বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে, এটা নিয়ে চিন্তা করা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নীরব সমুদ্রের নিচের পৃথিবী আরও নিস্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে, আর এই নিস্তব্ধতার মধ্যে অসহায় প্রাণীরা আজ বিপন্ন।