সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারতের নদী মারাত্মকভাবে দূষিত

সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারতের নদী মারাত্মকভাবে দূষিত

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আমাদের দেশের প্রধান জলের উৎস – নদী। কিন্তু সরকারি স্তরে নদীর জলের গুণমানের পরীক্ষার ভয়াবহ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন (সিডব্লিউসি) তাদের গবেষণায় ভারতীয় নদী ও উপনদীর জলের নমুনায় দুই বা তার বেশি ধাতু শনাক্ত করেছে। ২০২৪ সালের আগস্টে প্রকাশিত তাদের প্রতিবেদনে, নিরাপদ সীমার বাইরে যে যে ভারী ধাতু শনাক্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, তামা, লোহা, সীসা, পারদ এবং নিকেল। এই ধাতুগুলো বিভিন্ন মাত্রায় এক বা একাধিক পর্যবেক্ষণ স্টেশন থেকে শনাক্ত করা গেছে। এক একটা নদীতে এক এক ধরনের এমনকি দু-তিনটে ধাতুর উপস্থিতির কথা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে দেশের ৮১টা নদী ও উপনদীতে অত্যন্ত উচ্চ ঘনত্বে এইসমস্ত ধাতু পাওয়া গেছে। ভারতে ২০২২ সালের জানুয়ারী-ডিসেম্বর মাসে ৩২৮টা নদীর পর্যবেক্ষণ স্টেশনগুলোর মধ্যে ১৪১ টা অর্থাৎ ৪৩ শতাংশ নদীতে এক বা একাধিক বিষাক্ত ভারী ধাতুর মাত্রা আশঙ্কাজনক। নদীর জল বর্তমানে মানুষের কাজকর্মে ও প্রাকৃতিক সম্পদ উভয় কারণে ট্রেস এবং বিষাক্ত ধাতু দ্বারা দূষিত হচ্ছে। এই ভারী ও বিষাক্ত ধাতু নদীর জলে পাওয়ার জন্য মূলত গৃহস্থালী বা শিল্পজাত বর্জ্য জল, বর্ষায় চাষের জমির জল, নদীর উচ্চ অববাহিকা থেকে বয়ে আসা খনির জল দায়ী। এছাড়াও গবাদি পশু এবং মুরগির সার, অটোমোবাইল এবং রাস্তার কাজ থেকে হওয়া ডাম্পিং দায়ী। কুশভিন্দর ভোহরা, চেয়ারম্যান, সিডব্লিউসি, কেন্দ্রীয় জলশক্তি (জল সম্পদ) মন্ত্রকের প্রতিবেদনে বলেছেন, এই ধাতুগুলো জৈবভাবে বিনষ্ট না হওয়াতে, নির্ধারিত সীমার উপরে জলে তাদের উপস্থিতি উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। মানুষের বিপাকের জন্য তামা স্বল্প পরিমাণে প্রয়োজন কিন্তু তা বেশি মাত্রায় শরীরের পক্ষে বিষাক্তকর। আবার পারদ, সীসা, ক্যাডমিয়াম শরীরের পক্ষে ও পরিবেশের জন্য বিষাক্ত। আর্সেনিক থেকে শরীরে ক্ষত সৃষ্টি হয়। হাড়ের ক্ষতি, হাড়ের ঘনত্বের ক্ষয়, হাড় ভাঙার জন্য দায়ী ক্যাডমিয়াম। উচ্চ ঘনত্বের পারদ স্নায়ু, মস্তিষ্ক, কিডনির ক্ষতি করে।
প্রতিবেদনে গঙ্গা অববাহিকার নিম্ন গুণমানের জলের কথা প্রকাশ করা হয়েছে। জলের গুণগত মান জানার জন্য এখানে সবচেয়ে বেশি স্টেশনগুলো পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। গঙ্গা অববাহিকায় পর্যবেক্ষণ করা ১৬১টা জলের গুণমান সাইটের মধ্যে ৭৫টা বা ৪৭ শতাংশ ধাতব পদার্থের সীমা অতিক্রম করেছে বলে জানানো হয়েছে। আমাদের জাতীয় নদী গঙ্গার জল মূলত চারটে ভারী ধাতু দ্বারা দূষিত – আর্সেনিক, সীসা, লোহা এবং তামা। দক্ষিণে পশ্চিম-প্রবাহিত তাপ্তি নদীর অববাহিকা দূষনের দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। এর ৩৬টা স্টেশনের মধ্যে ৬৪ শতাংশ বা ২৩টা স্টেশনে বর্ধিত ধাতব পদার্থের দেখা মিলেছে। প্রতিবেদনে ধাতব দূষণ, জলের গুণমান সমস্যা মোকাবিলার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সিডব্লিউসি-এর মতে, বাস্তুতন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য, ভারী ধাতুর বিষক্রিয়ার বিপজ্জনক প্রভাব থেকে জনস্বাস্থ্যকে রক্ষা করার জন্য জল সম্পদ সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তারা জানিয়েছেন, জল চিকিত্সার জন্য নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তি অন্বেষণ করা যেমন প্রয়োজন তেমন ধাতু শিল্পে নতুন ধরনের প্রযুক্তি আনা দরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × 1 =