সাইবেরিয়ায় ‘নরকের দ্বার’ উন্মুক্ত হচ্ছে

সাইবেরিয়ায় ‘নরকের দ্বার’ উন্মুক্ত হচ্ছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সাইবেরিয়ায় মাটিতে একটা বিশাল গর্ত দেখা যাচ্ছে, যাতে সেখানকার মাটি ভেঙে ভেতরে ধুকছে। মাটি ভাঙার থেকেও সমস্যা হল এর থেকে কার্বন নির্গমন হয়ে বিশ্বের তাপমাত্রা আরও বাড়বে, জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা গভীর হবে। মহাকাশ থেকে তোলা ফটোতে দেখা যাচ্ছে এই গর্ত দ্রুত বাড়ছে। এই গর্তটা অনেকটা স্টিংগ্রে, বা হর্সশু ক্র্যাব অথবা দৈত্যাকার ব্যাঙাচির মতো দেখতে। ১৯৬০ এর দশকে স্যাটেলাইট ইমেজে এটা একটা খাঁজের মতো দেখা যেত, যা বিশেষ একটা দেখা যেত না। এখন মহাকাশ থেকে স্পষ্টভাবে এই বড়ো গর্ত যার চারদিকে খাড়া পাহাড়ের মতো অংশ, তা স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুসারে ১৯৯১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে এই গর্তের আকার তিনগুণ বেড়েছে। এই বাটাগে গর্তকে বাটাগাইকা, “নরকের প্রবেশদ্বার” হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এর নামের মতোই এটা আমাদের সমগ্র গ্রহের জন্য বিপদস্বরূপ হতে পারে।
উত্তর গোলার্ধের বৃত্তাকার আর্কটিক পারমাফ্রস্ট অঞ্চলের বরফ সমৃদ্ধ অংশ গলে গেলে এক ধরনের ভূমিধস, রেট্রোগ্রেসিভ থাও স্লাম্পস (আরটিএস) তৈরি হয়। আর্কটিক পৃথিবীর বাকি অংশের তুলনায় দ্রুত উত্তপ্ত হচ্ছে, তাতে দ্রুত পারমাফ্রস্ট গলছে। পারমাফ্রস্ট মাটির পুরু স্থায়ী হিমায়িত স্তর। বাটাগে ক্রেটার বিশ্বের সবচেয়ে বড় “রেট্রোগ্রেসিভ থাও স্লাম্প”। নিকটবর্তী শহর বাটাগে থেকে এই ক্রেটারের নামকরণ করা হয়েছে। পারমাফ্রস্ট গলনের ফলে ভূমিধসের সৃষ্টি হয়ে একটা গর্ত তৈরি হয় যেখানে ভূমি গুহার মতো হয়ে যায়।
পারমাফ্রস্ট গলার সাথে সাথে, সমস্ত মৃত গাছপালা, প্রাণী যেগুলো শতাব্দী ধরে এর ভিতরে হিমায়িত অবস্থায় আছে তা পচতে শুরু করবে। আর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন নির্গত করতে থাকবে। এই তাপ আটকে রাখা গ্যাসগুলো বিশ্বের তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি করবে, ফলে দ্রুত পারমাফ্রস্ট গলতে থাকবে। পারমাফ্রস্ট উত্তর গোলার্ধের ১৫% ভূমি জুড়ে রয়েছে, আর বায়ুমণ্ডলের তুলনায় দ্বিগুণ কার্বন ধারণ করছে। জুন মাসে জিওমরফোলজি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায়, গবেষকরা বাটাগে ক্রেটারের ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরিতে আর সময়ের সাথে সাথে এর প্রসারণ গণনা করতে স্যাটেলাইট ও ড্রোন ডেটা ব্যবহার করেছেন। দেখা যাচ্ছে এই গর্তের আয়তন প্রতি বছর প্রায় এক মিলিয়ন ঘনমিটার বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের গণনা অনুসারে এর থেকে ৪০০০-৫০০০ টন কার্বন নির্গমন হচ্ছে। আমেরিকার ১৭০০ থেকে ২১০০ বাড়ি থেকে বছরে যতটা নির্গমন হয়, এটা তার সম পরিমাণ।