সাগরকুসুম ও মানুষের অভিন্ন জৈব কৌশল

সাগরকুসুম ও মানুষের অভিন্ন জৈব কৌশল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৬ জুন, ২০২৫

সাগরকুসুম (এনিমনি) একটি সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণী যা দেখতে অনেকটা ফুলের মতো। এরা নরম দেহবিশিষ্ট হলেও এদের দেহে লুকিয়ে আছে এক আশ্চর্য প্রাচীন শারীরিক নকশা যা মানুষের মতো প্রাণীদের জটিল শারীরিক গঠনের সাথে মানানসই।
ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক সাগরকুসুমের শরীর গঠনে বি এম পি শাটলিং নামক প্রক্রিয়ার গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য একটি পরীক্ষা করেন। এই প্রক্রিয়াটির মাধ্যমেই এই ধরনের প্রতিসম প্রাণীদের সম্মুখ এবং পশ্চাত ভাগ নির্ধারিত হয়। এই একই প্রক্রিয়া আবার মানুষসহ বহু প্রাণীর মধ্যেও দেখা যায়। ফলে বোঝা যায় , এই জৈবিক পদ্ধতির উৎপত্তি ৬০০ মিলিয়ন বছরেরও আগে।
বোন মর্ফোজেনেটিক প্রোটিন( বি এম পি) এক ধরণের সিগন্যালিং প্রোটিন যা কোষকে বলে দেয় সেটি কি ধরণের টিস্যুতে পরিণত হবে – ত্বক, স্নায়ু বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ইত্যাদি। আর কার্ডিন নামক প্রোটিনটি বি এম পি কে তার কাজে বাধা দেয় বা সেটিকে দেহের অন্য অংশে স্থানান্তর করেও দিতে পারে। এই স্থানান্তর বা শাটলিং-এর ফলে বি এম পির নির্দেশ অনুযায়ী ভ্রূণের কোষগুলো তাদের কাজ ঠিকমতো করে ও শরীরের সঠিক গঠন নিশ্চিত করে। এই কার্ডিন প্রোটিন শরীরের অগ্র-পশ্চাত গঠনে সহায়ক।

গবেষণায় ব্যবহৃত হয় নিমাটোস্টেল্লা ভেক্টেন্সিস নামক একটি ছোটো সাগরকুসুম। যখন গবেষকরা কার্ডিনের উৎপাদন বন্ধ করে দেন, তখন বি এম পি সংকেতও বন্ধ হয়ে যায় এবং এদের দ্বিতীয় দেহ অক্ষ আর তৈরী হয় না। আবার যেক্ষেত্রে দুটি কার্ডিন প্রয়োগ করা হয়, সেখানে একটি স্থির এবং অপরটি চলমান থাকে। দেখা যায় শুধু চলমান কার্ডিনই বি এম পি সংকেতকে ফিরিয়ে দেয়। ফলে প্রমাণিত হয় কার্ডিন শুধু বাধা সৃষ্টি করে না, বরং সক্রিয়ভাবে বি এম পি বহনও করে।
গবেষকদের মতে এই প্রক্রিয়াটি শুধু দ্বিপার্শ্বীয় প্রাণী অর্থাৎ যাদের সম্মুখ ও পশ্চাত পাশ সমান, তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সাগরকুসুমের মতো সরল প্রাণীতেও আছে। ফলে বোঝাই যায় এটি অত্যন্ত প্রাচীন ও সম্ভবত সর্বপ্রথম প্রাণীদের পুর্বপ্রজন্ম থেকেই এসেছে।
এই গবেষণা শুধু অতীতকে জানান দেয় না। মানুষ সহ সমস্ত ধরণের প্রাণীর দেহ বিকাশে বিএমপি সংকেতগুলি গুরুত্বপূর্ণ, তাই ভবিষ্যতের চিকিৎসা ,জন্মগত ত্রুটি ও স্টেম সেল গবেষণাতেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সরল প্রাণীদের অধ্যয়ন করে আমরা আমাদের দেহ গঠনের শিকড় ও কিভাবে তা মেরামত করা বা গড়ে তোলা যায় তার সন্ধান পেতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 + two =