সাগরে নব প্রজাতির খোঁজ

সাগরে নব প্রজাতির খোঁজ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩১ মে, ২০২৫

সম্প্রতি একটি বিশাল সামুদ্রিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে ৮৬৬ টি নতুন প্রজাতি চিহ্নিত করা হয়েছে। এটি সামুদ্রিক অন্বেষণের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর ফলে মিলল কত অজানা জীবের সন্ধান।এই গবেষণার অন্যতম চমকপ্রদ আবিষ্কার হল গিটার আকৃতির হাঙর প্রজাতি। প্যাসিফিক শার্ক রিসার্চ সেন্টারের ডেভিড ইবার্ট লস্ট শার্ক গাই নামে খ্যাত প্রজাতিটিকে প্রথম ৬৫০ফুট গভীরে সন্ধান পান।

বিশেষজ্ঞদের মতে পৃথিবীর ৭১%ই সমুদ্র এবং এর মাত্র ১০% জীববৈচিত্র্য এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়েছে। অর্থাৎ এখনো ১-২মিলিয়নেরও বেশি সামুদ্রিক প্রজাতির পরিচয় অধরা। এই অনুসন্ধানটির প্রকৃতি বহুমুখী। একদিকে কত অজানা অচেনা প্রজাতিকে বিশ্বের সামনে উন্মোচিত করছে, আবার অজানা বহু প্রজাতি যারা হয়তো বিলুপ্তপ্রায় তাদের সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও সাহায্য করতে পারে।

এই নতুন সামুদ্রিক প্রজাতিগুলোর স্বতন্ত্র চিকিৎসাগত ও পরিবেশগত গুরুত্বও আছে। যেমন-Turridrupa magnifera নামক শিকারি সামুদ্রিক শামুক নিউ ক্যালেডোনিয়া ও ভ্যানুয়াতুর জলে প্রায় ৬৫০ থেকে ১৬০০ ফুট গভীরে পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন যে এরা শিকার ধরার সময় এদের দেহের অত্যন্ত বিষাক্ত তীরসদৃশ অংশ ব্যবহার করে।এই অংশের বিষাক্ত যৌগ ব্যথা-বেদনা উপশম এবং ক্যান্সারের মতো মারণরোগের চিকিৎসাসংক্রান্ত গবেষণায় ব্যবহার করা যেতে পারে। বিরল প্রজাতির সন্ধান মানব স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সাফল্য আনতে পারে, বিশেষত যদি গবেষকরা তাদের বেঁচে থাকার জৈব রাসায়নিক রহস্য পরীক্ষা করতে পারেন। এছাড়াও মালদ্বীপে অকটোকোরাল প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে, যারা প্রবাল প্রাচীর গঠনে এবং স্থানীয় মাছ ও অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের আবাসস্থল তৈরিতে সাহায্য করে।

বিজ্ঞানীরা বলেছেন নতুন প্রজাতির প্রথাগত শ্রেণিবদ্ধকরণে অনেক সময় লাগে , যার ফলে এদের সংরক্ষণের প্রচেষ্টা ও সময় দুইই পিছিয়ে যায়। তাই মহাসাগরের জীব বৈচিত্রর সুমারি উপাত্ত সংগ্রহের মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। এটি সাধারণ জনগণের কাছে গবেষকদের নতুন প্রজাতির উদ্ভাবন সংক্রান্ত তথ্য খুব দ্রুত প্রকাশ করতে সাহায্য করবে ।
ঠিক করা হয়েছে ২০২৫ সালে এই গবেষণা সংক্রান্ত অভিযান আরও বিস্তৃত এলাকায় করা হবে ,যাতে প্রশান্ত মহাসাগর, ভারত মহাসাগর ও দক্ষিণ মহাসাগরের গভীর জলের অজানা আরও কিছু জীবন চিহ্নিত করা যায়।

এই আবিষ্কারগুলি পরিবেশসংরক্ষণ ও জলজ জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে এবং জলজ জীববৈচিত্রের নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। আবার পরিবেশ সংরক্ষণ , মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণায়ও গুরুত্বপুর্ণ অবদান রাখবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten + 2 =