
৮৫ কোটি বছরের পুরনো প্রাগৈতিহাসিক রহস্য লুকিয়ে ছিল পাথরের তলায়। সেই রহস্য ভেঙে বেরিয়ে এল একটি অচেনা, ভয়াল সামুদ্রিক দানব-‘ট্রাস্কাসাউরা স্যান্ড্রে’। উত্তর আমেরিকার কিছু ইলাসমোসরের জীবাশ্ম, যেগুলিকে এতকাল ‘পরিচিত’ মনে হতো, এখন তাদেরই আত্মপ্রকাশ ঘটছে ‘অত্যন্ত অদ্ভুত’ নতুন প্রজাতি হিসেবে। আসলে এগুলির সাথে আগের প্লেসিওসরের কোনও মিল নেই!
১২ মিটার দৈর্ঘ্যের এই দানবটির গলা লম্বা। ভারী ও তীক্ষ্ণ-ধারালো দাঁত। ঘাড়ে কমপক্ষে ৫০টি হাড়। আর এর হাড়ের গঠন বলছে, সমুদ্রের তলদেশে সাঁতার কাটতে এরা ছিল ওস্তাদ।এদের প্রধান শিকার ছিল অ্যামোনাইট। প্যাঁচানো শাঁসওয়ালা এই প্রাণীদের শক্ত খোলস চূর্ণ করতে ট্রাস্কাসাউরার দাঁত ছিল নিখুঁত অস্ত্র। এই দানব স্রেফ সমুদ্রের নিচে থেকে শিকার ধরত না, ঝাঁপিয়ে পড়ত অতর্কিতে। গবেষকরা বলেন, এটি সম্ভবত প্রথম প্লেসিওসর, যে এই ধরনের শিকারের প্রয়াস পায়। তবে এখানে একটি বিশেষ মোড় আছে। এই জীবাশ্ম মোটেই কোনও নতুন আবিষ্কার নয়। ১৯৮৮ সালে কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপের পান্টলেজ নদীর পাশে শেষ ক্রিটেসিয়াস যুগের শিলার মধ্যে এই জীবাশ্মটি প্রথম দেখা যায়। তারপরও এর আরও টুকরো একত্রিত হতে থাকে সংগ্রহশালার কাচঘরে। যেমন,ডান দিকের বাহু বা সম্মুখ পদের একটি দীর্ঘাস্থি যা কাঁধ হতে কনুই পর্যন্ত বিস্তৃত ( প্রগন্ডাস্থি) এবং একটি সুসংরক্ষিত, কিশোর কঙ্কাল যার মধ্যে বক্ষ, কোমরবন্ধ এবং বিভিন্ন অঙ্গ রয়েছে। মোট তিনটি প্রাণী নতুন গবেষণাপত্রে আলোচিত সংগ্রহের অংশ। ছোট ছোট ধাঁধা সমাধান করে এভাবেই গড়ে উঠতে থাকে পূর্ণ গল্প। ২০২৩ সালে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশ এটিকে তাদের ‘প্রাদেশিক জীবাশ্ম প্রতীক’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। এমনকি এক জনমত জরিপেও, ইলাসমোসর জিতে যায় ৪৮% ভোটে। এক কথায়, অতীতের দানব এখন তারকা! জীবাশ্মটির নাম দেওয়া হয় মাইকেল ও হিদার ট্রাস্কের নামে। ১৯৮৮ সালে এঁরাই প্রথম এটিকে খুঁজে পান। আর প্রজাতির নাম ‘স্যান্ড্রে’ এসেছে অধ্যাপক ও কিফের স্ত্রী স্যান্ড্রা লি ওকিফের স্মরণে। তিনি একজন স্তন ক্যান্সারযোদ্ধা। কারণ, প্রাণীটি নিজেও ছিল এক লড়াকু যোদ্ধা। । প্রফেসর কিফ বলেন, “জীবাশ্মের নথিটি বিস্ময়ে ভরা এবং কখনও কখনও, এই বিস্ময় নিজেই বিজ্ঞানকে নতুন গল্প বলতে বাধ্য করে।” প্রথম দর্শনেই তিনি বুঝেছিলেন জীবাশ্মগুলি আলাদা। নতুন কোনো একটা সম্পূর্ণ নতুন গোষ্ঠী। তবে চিলির রদ্রিগো ওটেরো প্রথম সন্দেহ করেছিলেন, এটি অ্যান্টার্কটিকার প্লেসিওসরদের মতো কিছু নয়। তিনি ঠিকই বলেছিলেন- এটি ছিল আরও উদ্ভট, আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ, একেবারে একরোখা অভিযোজনে গড়ে ওঠা সামুদ্রিক শিকারি। এখন, ট্রাস্কাসাউরা দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাস আর বিজ্ঞানের সংযোগস্থলে- এক অজানা জগতের বার্তাবাহক হয়ে।