
সূর্যের আলো পড়তেই, সবুজ পাতাগুলি শুরু করে এক অনন্য রসায়ন- ফটোসিন্থেসিস বা সালোকসংশ্লেষ। অদৃশ্য অথচ খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই সালোকসংশ্লেষ ঘটে গাছের ঠিক কোন অংশে? কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ, অক্সিজেন ত্যাগ কিংবা গ্লুকোজ তৈরি- কে দেয় এতসব সংকেত? উত্তর লুকিয়ে জিনের ভাঁজে ভাঁজে। দু তিনটি নয় বরং হাজার হাজার জিন নিজের নিজের জায়গা থেকে নিজেদের সূক্ষ্ম কাজগুলি সম্পাদন করে চলেছে। তবে তাদের কর্মসম্পাদনার মান নির্ভর তাদের গঠনবিন্যাসের উপর। অর্থাৎ, জিনের ত্রিমাত্রিক বিন্যাস বা ‘জেনোম স্থাপত্য ‘ কেমন, তার উপর। চিনের হুয়াঝং অ্যাগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো উদ্ভিদের জিনোমকে ত্রিমাত্রিক কাঠামোয় বিশ্লেষণ করে দেখেছেন কীভাবে সালোকসংশ্লেষে জড়িত জিনগুলো একে অপরের সঙ্গে মিলে দলবদ্ধভাবে কাজ করে। তারা ধান ও টমেটো গাছের কোষ থেকে এই ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি করেছেন। আর তাতে উঠে আসে এক অভিনব তথ্য- সালোকসংশ্লেষ সুসম্পন্ন করতে এক-দু’টি জিন প্রয়োজন নয়, বরং অনেক দূরে থাকা জিনগুলিও একসঙ্গে সংগীতের মতো সমন্বয়ে কাজ করে চলেছে। প্রফেসর জিনলি ঝাং বলেন, “আমরা আগেও জেনেছি কোন জিন কী করে, কিন্তু এবার আমরা দেখতে পাচ্ছি তারা কীভাবে একে অপরকে প্রভাবিত করে। যেন নাচের ছন্দে এগোয়।”এই গবেষণায় ব্যবহার করা হয় নতুন ধরনের প্রযুক্তি। ফলে শুধু জিনের অবস্থান নয়, বরং তারা কিভাবে ভাঁজ খায়, জোট বাঁধে, কিংবা কোন জিন কাকে ধাক্কা দিয়ে সক্রিয় করে তোলে সবই স্পষ্ট জানা যায়। এই তথ্য ব্যবহার করে ভবিষ্যতে এমন ফসল বানানো সম্ভব , যেগুলির সালোকসংশ্লেষ ক্ষমতা আরও শক্তিশালী হবে। অর্থাৎ, কম জমি ও জলে, বেশি পরিমাণে সবুজ ফসল পাওয়া যাবে। এই গবেষণা, ভবিষ্যতের কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং পরিবেশ রক্ষার রূপরেখা বদলে যেতে পারে!