সিঙ্গুলারিটি-বিহীন কৃষ্ণগহ্বর

সিঙ্গুলারিটি-বিহীন কৃষ্ণগহ্বর

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

আলবার্ট আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুসারে, কৃষ্ণগহ্বরের সিঙ্গুলারিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল বিষয়। সিঙ্গুলারিটি হল এমন একটি বিন্দু, যেখানে পদার্থবিজ্ঞানের কোনো নিয়মই খাটে না। আমাদের জানা সকল বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব, এই বিন্দুতে এসে অকার্যকর হয়ে পড়ে। সিঙ্গুলারিটির প্রকৃতি এবং তার সমাধান খুঁজে পাওয়া পদার্থবিজ্ঞানের কাছে এক বিস্ময়কর সমাধানের সমান। সম্প্রতি, বিশেষজ্ঞদের একটি দল মহাকর্ষীয় প্রভাব থেকে নিয়মিত কৃষ্ণগহ্বর সৃষ্টির বর্ণনা দিয়ে চলেছেন এবং প্রথাগত কৃষ্ণগহ্বরের সিঙ্গুলারিটি সমস্যা সমাধানের একটি নতুন মডেল প্রস্তাব করেছেন। এতকাল, সিঙ্গুলারিটি তত্ত্ব বোঝার জন্য অস্বাভাবিক পদার্থের (এক্সোটিক ম্যাটার) ধারণা ব্যবহার করা হত। এগুলি মূলত তাত্ত্বিক, প্রকৃতিতে এগুলির কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। আমাদের পরিচিত পদার্থের বৈশিষ্ট্যগুলির থেকে ভিন্ন এই অস্বাভাবিক বা বহিরাগত পদার্থ। পদার্থের মধ্যে সাধারণত ঋণাত্মক শক্তি ঘনত্ব থাকে, যা মহাকর্ষীয় বিকর্ষণ সৃষ্টি করতে পারে এবং যা কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ আপেক্ষিকতায় শক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে। তবে, অস্বাভাবিক পদার্থের ধারণাগুলি বিভিন্ন তাত্ত্বিক মডেলে, যেমন ওয়ার্মহোল এবং কৃষ্ণগহ্বরের সিঙ্গুলারিটি সমাধান করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
সম্প্রতি, একদল গবেষক গাণিতিকভাবে দেখিয়েছেন যে উচ্চতর-ক্রমের মহাকর্ষীয় সংশোধনগুলি সিঙ্গুলারিটির তত্ত্ব ছাড়াই ঘটা সম্ভব। পূর্ববর্তী মডেলগুলিতে অস্বাভাবিক পদার্থের প্রয়োজন ছিল। তার বিপরীতে এই নতুন গবেষণা থেকে প্রকাশিত হয়েছে যে বিশুদ্ধ মহাকর্ষ — অস্বাভাবিক পদার্থ ক্ষেত্র ছাড়াই — সিঙ্গুলারিটি-বিহীন নিয়মিত কৃষ্ণগহ্বর তৈরি করতে পারে। আই সি সি ইউ বি -এর কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞান ও মহাকাশ পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের গবেষক পাবলো এ. ক্যানো জানান, “এটি শুধুমাত্র কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি দ্বারা স্বাভাবিক আইনস্টাইন সমীকরণের সংশোধনকে ভিত্তি করে নির্মিত। এক্ষেত্রে অন্য কোনো উপাদানের প্রয়োজন নেই।”
গবেষকরা তাদের তত্ত্বগুলিকে পাঁচ বা তার বেশি মাত্রার স্পেস-টাইমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে উল্লেখ করেছেন। ক্যানো জানান, “উচ্চতর স্পেস-টাইম বিবেচনা করার কারণটি শুধুমাত্র কারিগরি। এটি আমাদের সমস্যার গাণিতিক জটিলতা কমাতে সাহায্য করে।” তবে তারা বিশ্বাস করেন যে এই সিদ্ধান্তগুলি চার-মাত্রিক স্পেস-টাইমেও প্রযোজ্য হবে। গবেষকরা আশা করছেন যে এই নতুন মডেলটি মহাবিশ্বের সিঙ্গুলারিটি গঠন প্রতিরোধের প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা দিতে সাহায্য করবে। তাঁরা নিয়মিত কৃষ্ণগহ্বরের তাপগতীয় বৈশিষ্ট্যগুলোও পরীক্ষা করছেন। এগুলো তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে তাঁরা জানান। উদ্ভাবিত তত্ত্বগুলি সর্বজনীন এবং স্পষ্ট উপায়ে কৃষ্ণগহ্বরের তাপগতীয় বৈশিষ্ট বোঝার জন্য একটি শক্তিশালী কাঠামোর হদিশ দেয়। গবেষকরা চার-মাত্রিক স্পেস-টাইমে তাদের কাজ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছেন। তাঁরা কৃষ্ণগহ্বরের স্থিতিশীলতা ও সম্ভাব্য পর্যবেক্ষণযোগ্য সাক্ষ-প্রমাণ অনুসন্ধান করবেন। ক্যানো উপসংহার টানেন, “এই তত্ত্বগুলি শুধুমাত্র সিঙ্গুলারিটি-মুক্ত কৃষ্ণগহ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীই করে না, এই বস্তুগুলি কীভাবে গঠিত হয় এবং কৃষ্ণগহ্বরে পতিত পদার্থের ভবিষ্যৎ কী, তা বুঝতেও আমাদের সাহায্য করে।” এই গবেষণা তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।এর ফলে কৃষ্ণগহ্বরের গঠন ও আচরণের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 − 10 =